হাসানআল আব্দুল্লাহ বাংলার ভূমিজ এক নতুন শক্তি।...একজন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ চাষী যেমন পাথর ও আগাছা অগ্রাহ্য করে বলদের লেজ মুচড়ে লাঙল চালান, আব্দুল্লাহ-র কলম তেমনি অপ্রতিরোধ্য... কখনো বন্ধুর, কখনো সমতল, কিন্তু সর্বদাই গতিময়, দুর্বার, প্রবল শক্তির দ্বারা চালিত।... তিনি লিখেছেন যা সম্ভবত এ যুগের দীর্ঘতম কাব্য; তাঁর ‘নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ’ মহাকাব্যের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০৪। তাঁর ঔজ্জ্বল্যে, তাঁর ক্ষমতায়, তাঁর উৎপাদন শক্তিতে আমি অভিভূত। মহাকবি হবোই—এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে মধুসূদনের সার্ধশতাব্দী পরে হাসানআল আব্দুল্লাহর অবতরণ। মহাকবি দান্তে, মহাকবি মিল্টনের সচেতন অনুগামী যেমন ছিলেন মাইকেল, তেমনই আমাদের কালে হাসানআল। কবিতার বিশুদ্ধ কাব্যগুণ মাপা যায় না। তা যাদু। কাব্যের আঙ্গিকের মাপজোক হয়। এদিকে হাসানআল দিয়েছেন বিশেষ মনোযোগ। বাংলা ছন্দের বিষয়ে তাঁর আস্ত একটা বই আছে। বঙ্গ সরস্বতীকে তিনি জয় করবেন, বঙ্গ ভারতীর অঙ্গে-অঙ্গে তিনি রেখে যাবেন অক্ষয় চুম্বন, এমনই তাঁর সংকল্প। একই সঙ্গে ‘সনেট’ এবং ‘এপিক’ রচনা— এই অসম্ভব কর্ম জন কীটস কি জীবনানন্দ করেননি। করেছেন শুধু পূর্বোক্ত মহাকবিত্রয়: দান্তে, মিল্টন, মধুসূদন। এঁদের পর ইতিহাস কি চতুর্থ নাম যোগ করবে? ...তাঁর কাব্যশক্তিকে শুধু নয়, দুঃসাহসের প্রতিও সন্ত্রস্ত সেলাম! এবং প্রার্থনা করি, ইতিহাস এঁদের কাছাকাছি কোথাও তাঁর স্থান দেবে।
হাসানআল আব্দুল্লাহ নতুন ধারার সনেটের প্রবর্তক, নাম: স্বতন্ত্র সনেট। মানুষ ও মহাবিশ্বের চলমানতা নিয়ে তিনি লিখেছেন মহাকাব্য, নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ (অনন্যা, ২০০৭)। ২০১৪-এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নির্বাচিত কবিতার দ্বিতীয় সংস্করণ। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়েছে কবিতার ছন্দ, ২০১১ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। তাঁর দ্বিভাষিক গ্রন্থ ব্রেথ অব বেঙ্গল, ও আন্ডার দ্যা থিন লেয়ারস অব লাইট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ক্রস-কালচারাল কমিউনিকেশন্স। মূলত কবি, কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৩৫। হাসানআল আব্দুল্লাহ ২০১৬ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশে অনুষ্ঠিত।আন্তর্জাতিক সিল্ক কেউ কবিতা উৎসবে যোগ দেন এবং একই বছর বিশ্ব কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি ইয়োরোপীয় কবিতা পুরস্কার 'হোমার মেডেল'-এ ভূষিত হন। স্বতন্ত্র সনেটের জন্যে ২০১০ সালে তিনি পান লেবুভাই ফাউন্ডেশন পুরস্কার। ২০০৭ সালে তিনি নিউইয়র্কের অন্যতম প্রধান শহর কুইন্সের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সম্মান পান। ইংরেজী, ফরাসী, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, চাইনিজ, পোলিশ ও ভিয়েৎনামী ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা; স্থান পেয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অ্যান্থোলজিতে। আমন্ত্রিত কবি হিসেবে কবিতা পড়েছেন মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আন্তর্জাতিক দ্বিভাষিক কবিতা পত্রিকা শব্দগুচ্ছ সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির হাইস্কুলে গণিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।