মুসলিম সমাজে ‘মুসলিমকে কাফির বলা’ ফিতনা একটি প্রাচীন, কিন্তু আজও প্রাসঙ্গিক সমস্যা। এই গ্রন্থে ফিতনার প্রকৃতি, মানব রচিত বিধানে ফয়সালার হুকুম, ইসলামী শাসন ও বিচার ব্যবস্থার সঠিক পদ্ধতি এবং কুফর-ফিসক-নিফাক সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শাইখ আলবানী, শাইখ ইবনু বায ও শাইখ ইবনু উসাইমীনের দলীলসমৃদ্ধ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
বইটি সম্পর্কে কিছু কথা:
কেউ যদি ভুলবশত বা অজানায় মুসলিমকে কাফির আখ্যা দেয়, তার ফলাফল শুধুমাত্র অপরের ওপর নয়, বরং নিজেকেও বিপদে ফেলে। সচেতনতা ও সাবধানতার অভাবে এই ধরনের অভিযোগ সময়ে সময়ে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বইটি এই বিষয়গুলোকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে, ইসলামী বিধান অনুযায়ী শাসন ও ফয়সালা করার সঠিক পথ দেখায়, এবং যেসব পরিস্থিতিতে কাফির আখ্যা দেওয়া উচিত নয় তা স্পষ্ট করে তুলে ধরে।
বইটির মূল বৈশিষ্ট্য:
হকপন্থিদের দৃঢ় অবস্থান এবং তাদের দলীলসমৃদ্ধ বিশ্লেষণ।
কুফর, ফিসক ও নিফাকের প্রকারভেদ ও তা অনুযায়ী মুসলিম ব্যক্তির কাফির হওয়া বা না হওয়া।
তাকফীরী জামাআতের সঙ্গে বিতর্ক ও তাদের মূল অভিযোগের বিশ্লেষণ।
শাসক বা কর্তৃপক্ষকে কাফির আখ্যাদানের ক্ষতি এবং সতর্কতা।
মানবরচিত বিধানে বিচার ও ফয়সালার সঠিক পদ্ধতি।
শাইখ আলবানী, শাইখ ইবনু বায, শাইখ ইবনু উসাইমীনের আলোচনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংকলিত।
কেন এই বইটি পড়বেন:
মুসলিম সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ফিতনা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সতর্কতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে।
কাফির আখ্যাদানের ভুলপ্রয়োগ থেকে নিজেকে এবং সমাজকে রক্ষা করতে।
আজকের যুবসমাজের জন্য অপরিহার্য শিক্ষণীয় বিষয় ও দিকনির্দেশনা।
আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) আধুনিক যুগের একজন স্বনামধন্য আলেম। তাঁর জন্ম ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ায়। ১৯১৪ সালে আলবেনিয়ার রাজধানী স্কোডারে (বর্তমান নাম তিরানা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ আলেম। পারিবারিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও দ্বীনদারী ও জ্ঞানার্জনে তাঁরা ছিলেন সুখ্যাতিসম্পন্ন ও সমৃদ্ধ। আলবেনিয়ায় নারীদের পর্দা নিষিদ্ধ করার পর নাসিরুদ্দীন আলবানীর পরিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে চলে আসেন। দামেস্কে ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ হয়। এরপর প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে তাঁর পিতা তাকে স্বতন্ত্র পাঠ্যসূচী তৈরি করে দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই তিনি আল-কুরানুল কারীম, নাহূ, সরফ, তাজবীদ এবং হানাফী ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে থাকেন ও একইসাথে কোরআনের হিফযও সমাপ্ত করেন। ইসলামী শাস্ত্রে সুপন্ডিত এই আলেম ঘড়ি মেরামতের কাজকে পেশা হিসেবে নেন। এর অন্যতম কারণ ছিল জ্ঞানার্জন ও গবেষণার জন্য কিছু সময় বের করে নেওয়া। নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো সিরিয়ায় তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে দাওয়াত এবং এর পরবর্তী ঘটনাদি। এই কারণে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে তাঁর এই মতবাদের সাথে দামেস্কের প্রসিদ্ধ আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করায় তিনি এগিয়ে যেতে উৎসাহ পান। শাইখ আলবানী দামেস্ক, মিশর ও সিরিয়ার বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রস্তাব পান। তবে গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি যোগ দেননি। তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর বই সমগ্র, গবেষণাপত্র ও বক্তব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে এবং ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের কাছে সমাদর লাভ করেছে। তিনি কুয়েত, আরব আমিরাত ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে বক্তা হিসেবে ভ্রমণ করেছেন। আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর বই সমূহ হলো ‘আত-তারঘিব ওয়া আত-তারহিব (চার খণ্ড)’, ‘আত-তাসফিয়াহ ওয়া আত-তারবিয়াহ’,’সহীহ ওয়া যাই’ফ সুনান আত-তিরমিযী (চার খণ্ড)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা এক শতাধিক। হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রে পারদর্শী এই আলেম ১৯৯৯ সালে বাদশাহ ফয়সাল পুরষ্কারে ভূষিত হন। একই বছর জর্ডানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।