আধুনিক সভ্যতায় ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি যেন অমোঘ সত্য ও স্বতঃসিদ্ধ বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। মানুষের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা আর উন্নয়নের নামে এটি আজ পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের মৌলিক পাঠের শেকড়েই স্পষ্ট ঘোষণা করে, ‘হুকুম কেবল আল্লাহর।' আর এখানেই সংঘটিত হয় গণতন্ত্র ও ইসলামের মূল সংঘাত।
শায়খ খালিদ মানসুর ও মুফতি হাম্মাদ ওয়াজিরিস্তানি রচিত এ গ্রন্থ সেই মৌলিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে এক বিশ্লেষণাত্মক সংলাপের গা বেয়ে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রশ্নোত্তরের ভঙ্গিতে উপস্থাপিত অত্যন্ত সরল তবে শাস্ত্রীয় আলোচনায় উঠে এসেছে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ, ইসলামের দৃষ্টিতে তার অবস্থান এবং মানব তৈরি জীবনব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। তবে বক্ষ্যমাণ বইতে কেবল গতানুগতিক নিয়মে গণতন্ত্রের সমালোচনা করা হয়েছে—বিষয়টা এমন নয়; বরং কুরআন-সুন্নাহ, ফিকহ ও উলামায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে এ কথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, মানবজাতির মুক্তি কেবল আল্লাহ তাআলার সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত।
অনুবাদে লেখকের যুক্তিগুলোকে সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে বিষয়টি শুধু বিদ্বান বা গবেষকের জন্য নয়; সচেতন পাঠকের জন্যও বোধগম্য হয়ে উঠেছে। বইটি যেমন পাঠকের জ্ঞানের জগৎ আলোকিত করবে, একই সঙ্গে তাকে ভাবতে শেখাবে—'আমরা সত্যিই মুক্ত নাকি উত্তরাধুনিক পৃথিবীর নতুন স্লোগানের অন্ধ দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ?'
‘গণতন্ত্র ও ইসলাম’ তাই সচরাচর পড়ে রেখে দেওয়ার মতো বই নয়; বরং এ যেন মলাটবদ্ধ গভীর চিন্তার আমন্ত্রণ—যেখানে পাতায় পাতায় স্পষ্ট হয়েছে, অন্য কিছুতে নয়, একমাত্র ইসলামের শিক্ষা ও বিধানেই মানুষের জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত দিক-নির্দেশনা।