কবি ও প্রাবন্ধিক আবিদ আনোয়ার ছড়া এবং গান রচনায়ও সমান তৎপর ও পারদর্শী। সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ছড়াকার আবিদ আনোয়ার-এর জন্ম কাকতালীয়ভাবে সুকুমার রায়দের আদি-বাড়ির পাশে, মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে। তাই শৈশব থেকেই সুকুমার রায়ের দারুণ ভক্ত আবিদ আনোয়ার নিজেও তাঁর ছড়ায় কতটা মজা সৃষ্টি করতে পারেন তা জানেন এদেশের পাঠকসমাজ। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের ছড়া হয়ে উঠেছে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলির ছন্দোবদ্ধ রম্যকথন মাত্র। এতে শিশু-কিশোর পাঠকেরা বঞ্চিত হচ্ছে। তাই, কবি আবিদ আনোয়ার-এর উদ্দিষ্টজন মূলত শিশু-কিশোর। তাঁর কিছুকিছু ছড়া থেকে একইসঙ্গে শিশু-কিশোর ও বড়রা তাদের যার-যার রসটুকু নিংড়ে বের করে উপভোগ করতে পারেন। আমাদের দেশের কিশোরপাঠ্য কবিতা ও ছড়ায় বহুমাত্রিক মিল-প্রয়োগের যে-প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে তার সূচনাকারীদের অগ্রসারিতে ছিলেন কবি আবিদ আনোয়ার নিজেও। হাত-সাফাই/বাদশাভাই, চাটুকার/হাঁটু কার, উচ্চতর/পুচ্ছ ধর, পুত্রবর/সূত্র পড়, কাসন খায়/আশঙ্কায়, গরীয়ান/দড়ি আন, পত্রিকায়/কর্ত্রী খায়/বক্তৃতায়, তোরা ত্রস্ত/জরাগ্রস্ত, চেঁচায় খুব/বেজায় চুপ, জন্মদিন/কম কঠিন, ওজন তার/ভোজনটার, চোটপাটে/ঠোঁট কাটে, দোষ জানে/পোষ মানে, যাই চটে/তাই রটে এমনসব অভাবনীয় বহুমাত্রিক মিল, হাস্যকর পরিস্থিতির কল্পনা এবং নিপুণ ছন্দবিন্যাসের রসায়নে সৃষ্ট তাঁর ছড়া এক মজার জগতে নিয়ে যায় পাঠককে। এর মূলে আছে তাঁর ভাষার সরলতা যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক কঠিন বিষয়কেও সর্বজনবোধ্য করে তোলে। এই বইয়ের ছড়াগুলোতেও রয়েছে সকল শ্রেণির পাঠকের জন্য, বিশেষত ছোটদের জন্য, মজা উপভোগ করার সহজবোধ্য উপাদান।
আবিদ আনোয়ার-এর জন্ম ১৯৫০ সালের ২৪ জুন কিশোরগঞ্জ জেলায় কটিয়াদী থানার চর আলগী গ্রামে। বাবা মোঃ আজিমউদ্দিন ও মা হাসিনা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্সসহ ১৯৭২ সালে এমএসসি এবং পরবর্তী কালো কেবল লেখক হওয়ার সুবাদেই বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী বিশ্ববিদ্যালয়-কলাম্বিয়া থেকে ১৯৮৭ সালে রেকর্ড মার্কসহ সাংবাদিকতায় এমএ পাশ করেন এবং একাডেমিক কৃতিত্ব ও সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল জার্নালিজম স্কলারশিপ সোসাইটি'র সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া, গল্প ও গান রচনায় এবং সাহিত্য সমালোচনায় তিনি সমান পারদর্শী। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চৌদ্দ। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদক, সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৯৬ সালে রাইটার্স-এর স্মারক পদক ও সংবর্ধনা, ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি পুরস্কার (সৈয়দ নজরুল ইসলাম পদক) ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সংবর্ধনা, ছড়া-সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার এবং কবিতায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর রচিত ইংরেজি স্ক্রিপ্টনির্ভর অনুষ্ঠানের জন্য দুই-দুইবার (২০০৫ ও ২০০৮ সালে) বাংলাদেশ বেতার কমনওয়েলথ ব্রডকাস্টিং অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার পেয়েছে। অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরির শেষে তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-র প্রকাশনা বিভাগে কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে কর্মরত।