“মা”—এই ছোট্ট শব্দের ভেতরেই নিহিত আছে অসীম মহিমা, অগাধ ভালবাসা আর গভীর ত্যাগের আলো। পৃথিবীর সব ভাষায় সবচেয়ে মধুর যে শব্দ, তা হলো ‘মা’। তাঁর স্পর্শে, তাঁর দোয়া আর তাঁর স্নেহেই গড়ে ওঠে সন্তানের জীবন। মা শুধু সন্তান জন্ম দেন না, তিনি সন্তানকে মানুষ করার জন্য নিজের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-সুবিধা, এমনকি জীবনকেও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকেন।
কবি তাঁর এ কাব্যগ্রন্থ “শব্দে জেগে থাকা মা জননী”-তে মায়ের সেই অমলিন স্নেহ ও চিরন্তন ভালবাসাকে বহুরূপে প্রকাশ করেছেন। এখানে মায়ের প্রতি সন্তানের টান, মাকে হারানোর বেদনা, জীবনের অন্তর্দহন কিংবা সামাজিক বৈষম্যের ভেতরে মায়ের অবস্থান সবকিছুই উঠে এসেছে কাব্যের স্রোতে। শুধু মা-সন্তান সম্পর্ক নয়, কবি তুলে ধরেছেন মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসাও। মাতৃভূমি আর জননী—দুটোই যেন কবির কাছে সমান; যাদের টানেই কবি বাঁচতে চান, লিখতে চান, সংগ্রাম করতে চান।
গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা একেকটি সজীব ছবি। কখনো দেশপ্রেম, কখনো প্রিয়তমার প্রতি আকুলতা, কখনো আবার হারানো শৈশবের স্মৃতি বা করোনা মহামারির ভয়াবহতা- সবকিছুর ভেতর দিয়েই মায়ের আদর, মায়ের ছায়া কিংবা মায়ের অনুপস্থিতি যেন বারবার ফিরে আসে। এতে বোঝা যায়, কবির চেতনার মূলে মা-ই হলেন প্রধান প্রেরণা।
“শব্দে জেগে থাকা মা জননী” তাই শুধু একটি কাব্যগ্রন্থ নয়, এটি প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে মা’কে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা। মাতৃস্নেহ, মাতৃভূমি ও মানবতার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার এ কাব্যগ্রন্থ পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।
লেখক মোঃ কাউসার সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক নবীন অথচ খ্যাতিমান কণ্ঠ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২০০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকার ডেমরায়। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের ভাতুরী গ্রামে। শৈশব থেকেই সাহিত্যচর্চার প্রতি অনুরাগী তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর পিতা মোঃ বাবুল মিয়া এবং মাতা মোছাঃ রুমা আক্তার। দুর্ভাগ্যবশত, ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তাঁর মাতা পরলোকগমন করেন। আরও শোকের বিষয়, লেখকের একমাত্র বোনও শৈশবে মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি গণিত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং সরকারি স্বীকৃত ফার্মাসি ট্রেনিং কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বহুমুখী প্রতিভাধর মোঃ কাউসার আহমেদ কেবল লেখকই নন, বরং একজন সম্মানিত শিক্ষক ও সমাজসেবী হিসেবেও পরিচিত। ইতোমধ্যেই তিনি বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন। তাঁর লেখনীতে প্রেম, বেদনা, সমাজবাস্তবতা ও জীবনের অনাবিল সত্য ফুটে ওঠে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৬-এ তাঁর তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে পাঠকের মনে বিশেষ স্থান করে নেবে। নবীন এই লেখকের কলম আরও সমৃদ্ধ হোক—এই শুভকামনা রইল।