আজ ১২ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন এই পৃথিবীতে এসেছি। আজ আমার জীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হলো। একইসঙ্গে আত্মজীবনীমূূলক রচনা জীবনের যতিচিহ্নগুলো’রও পঞ্চাশতম পর্ব রচনা শেষ হলো। সংসারে পঞ্চাশ বছর তেমন কিছুই না হয়তো কিন্তু মানবসন্তানের জীবনে এই সময়টুকু অনেক। বহু মহামানবই এর বেশি আয়ু পাননি। এই সময়টুকুর ভেতরই তাঁরা জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম সম্পাদন করে গেছেন। বিশ্বকে দিয়েছেন প্রাচুর্য, জগৎকে করেছেন সুখময়। সেদিক বিবেচনায় কিছুই করতে পারিনি। এই না পারার জন্য আমার ইচ্ছাশক্তি কোনোভাবেই দায়ী নয়, দায়ী নয় সাধনাও। এরজন্য একমাত্র দায়ী আমার অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও প্রস্তুতিহীনতা।
এত-এত নেতিবাচক কারণের মধ্যেও পেছন ফিরে দেখি, এই সময়ের মধ্যে লিখেছি দুই শতাধিক কবিতা। লিখেছি বেশকিছু গল্প, প্রচুর প্রবন্ধ, করেছি বেশকিছু বিষয়ে গবেষণাও। এসবের ভেতর থেকে প্রকাশিত হয়েছে চারটি কবিতাগ্রন্থ, একটি গল্পগ্রন্থ ও ১১টি প্রবন্ধ-গবেষণাগ্রন্থ। আমার মতো নির্জ্ঞান ক্ষুদ্র মানুষের হাতে এতগুলো গ্রন্থ প্রকাশ নিজেকে কখনো কখনো সান্ত্বনা দেয় বটে, কিন্তু তৃপ্তি দেয় না। তবু লিখি। লিখতে লিখতেই করোনাকালে, ২০২০ সালে মনে হলো, নিজের শৈশব-কৈশোরকালের স্মৃতিকথা লিখে রাখি। লিখতে লিখতে আজ পঞ্চাশতম পর্বও রচিত হয়ে গেলো। রচিত হলো আমার জন্ম থেকে শুরু করে কলেজে ভর্তি-পর্যন্ত শৈশব-কৈশোরপর্বের ঘটনাবহুল জীবনের অধ্যায়।
আমি একজন কৃষকপুত্র। তবে, বাবা কেবল কৃষকই ছিলেন না, ছিলেন বণিকও। একইসঙ্গে ছিলেন সাহিত্যের সমঝদার পাঠক। সাহিত্যের পাঠ তাঁর কাছেই। বিষাদসিন্ধু, হাতেমতায়ী, ছহি জঙ্গনামা’র মতো কালোত্তীর্ণ সাহিত্যকর্মের পাঠ বাবার হাত ধরেই। পরবর্তী সময়ে কাকা ও বিভিন্নজনের সংগ্রহ থেকে বাল্মিকীর রামায়ণ, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের মহাভারত, আল মাহমুদের যেভাবে বেড়ে উঠিসহ প্রচুর বই-সাময়িকী পাঠও আমার মানসগঠনে বিপুল ভূমিকা রেখেছে। এসব মহার্ঘ গ্রন্থ পাঠ করতে-করতেই সাহিত্যের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছি। সেই আকর্ষণেরই ফলই আমার ১৬টি বই। এরই ফল এই ক্ষুদ্র সমাত্মজীবনীমূলক রচনাও। এই বেড়ে ওঠার পথে যাদের আশীর্বাদ আমার পাথেয় হয়ে উঠেছিল, সেই বাবা-মা, চাচা-চাচি, আমার শিক্ষাগুরুকুল, সতীর্থ, সহপাঠীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসা রেখেই এই ক্ষুদ্র গ্রন্থখানি পাঠকদের হাতে তুলে দিলাম।