ا مَعَهُمْ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
আল্লাহ তাআলা মানুষকে অজস্র, অগণিত নেয়ামত দান করেছেন। এসব নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও দামি নেয়ামত ইমান। ইমানের হেফাজত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকের একান্ত কর্তব্য- সে সবসময় নিজের ইমান পর্যবেক্ষণে রাখবে। তাতে যেন কোনো প্রকার ত্রুটি সৃষ্টি না হয়। ইমানের শুদ্ধতা নির্ভর করে আকিদার বিশুদ্ধতার ওপর। ইমান ঠিক থাকলে জান্নাতে প্রবেশ সম্ভব। আল্লাহ না করুন- আকিদার মধ্যে যদি ত্রুটি ও বক্রতা চলে আসে, তাহলে পরকালের আজাব থেকে মুক্তির কোনো উপায় থাকবে না। কবি বড় চমৎকার বলেছেন-
إِنَّ الْعَقَائِدَ كُلَّهَا ، أُلٌّ لِإِسْلَامِ الْفَتَى إِنْ ضَاعَ أَمْرُ وَاحِدُ ، مِنْ بَيْنِهِنَّ فَقَدْ غَوَى
আকিদার প্রত্যেকটি বিষয় মানুষের ইমানের ভিত্তিমূলের মর্যাদা রাখে।
একটি বিষয়ও যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পতন ও পদস্খলন অনিবার্য।
ইসলামি শরিয়ত দুটি জিনিসের সমষ্টি। আকিদা ও আমল। আমলের মধ্যে যদি কোনো ত্রুটি থেকে যায়- তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমার আশা করা যায়। ত্রুটি পরিমাণ আজাব ভোগ করে হলেও বান্দা জান্নাতে চলে যাবে। বদআমলের শান্তি চিরস্থায়ী হবে না। কিন্তু আকিদা ভ্রান্ত হলে তার আজাব হবে চিরস্থায়ী।
আকিদা ও আমলের পার্থক্য একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝা যেতে পারে। আকিদা হলো সংখ্যার মতো। আর আমলের দৃষ্টান্ত শূন্যের (০-এর) মতো। সংখ্যা ছাড়া শূন্য অর্থহীন। আপনি যত ইচ্ছা শূন্য লিখুন। যতক্ষণ পর্যন্ত এর সঙ্গে কোনো সংখ্যা যুক্ত না হবে- এগুলোর কোনো মূল্য নেই। পক্ষান্তরে ১ (এক) সংখ্যাটি শূন্য ছাড়াও অর্থবহ। যদিও পরিমাণে কম।
এমনিভাবে বিশুদ্ধ আকিদার সঙ্গে যখন আমল যুক্ত হবে, তখন তা
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
(যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। -সুরা আনআম: ১৬০
-এর বাস্তবতায় রূপ নেবে; ১ সংখ্যার সঙ্গে শূন্য যুক্ত হলেই যেমন দশ হয়ে যায়। তবে শূন্যের জন্য এটাও শর্ত যে, তা ১ এর ডানে বসবে; তাহলেই দশ হবে। অন্যথায় অর্থহীনই থেকে যাবে।
বিশুদ্ধ আকিদার সঙ্গে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাহল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-র সুন্নতে সুশোভিত আমল থাকবে- তখন তা অনেক উপকারী হবে। আমল সুন্নতের খেলাফ হলে ততটা ফায়দা দেবে না। তবে সংখ্যা তথা আকিদার ফায়দা এক্ষেত্রেও অর্জিত হবে। জাহান্নামের চিরস্থায়ী আজাব থেকে বেঁচে যাবে।
উক্ত উদাহরণ থেকে একটি সংশয় নিরসন হয়ে যায়- কেউ কেউ বলে থাকে, অনেক অমুসলিম ভালো কাজ করে। তারপরও কি তারা চিরদিনের জন্য জাহান্নামে যাবে? উত্তর স্পষ্ট। তার কাছে এককই (আকিদা) নেই, যা জান্নাতে প্রবেশের প্রধান শর্ত। তাই তার প্রচুর আমলও শূন্যের মতো অর্থহীন।
আরো একটি যুক্তি হলো- 'মুসলমান ও কাফের উভয়ের আমলের সময় তো সীমিত। তাহলে মুসলমান কেন চিরদিনের জন্য জান্নাতে যাবে, আর কাফের কেন চির দিনের জন্য জাহান্নামে জ্বলবে?' এর কারণ তাদের নিয়ত। হাদিস শরিফে এসেছে, إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنَّيَّاتِ )সকল আমলের ভিত্তি নিয়তের ওপর।) কাফেরের মনের মধ্যে আছে, অনন্তকাল বেঁচে থাকলেও কুফরিই করতে থাকব। পক্ষান্তরে একজন মুসলমানের নিয়ত হলো, অসীম জীবন/অফুরন্ত হায়াত পেলেও ইসলামের ওপরই অবিচল থাকব। এই নিয়তের ভিত্তিতে অনন্তকালের জান্নাত অথবা চিরস্থায়ী জাহান্নাম নির্ধারিত হবে।
হজরত থানভি রহ. তাঁর (আল মুরাদ নামে প্রকাশিত) বয়ানে এই সংশয়টির নিরসনে বলেন, অনেক দিল-দরিয়া মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- কাফেরের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম কেন নির্ধারিত হয়েছে। কুফর তো সে করেছে কিছু সময়। যতটুকু জীবন পেয়েছে। অথচ শান্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
বাহ্যত এটা ন্যায় ও ইনসাফের পরিপন্থি মনে হয়। এখানে ব্যাপার হলো, কাফের যখন শিরক ও কুফর করেছে, আল্লাহ তাআলার সীমাহীন হক সে নষ্ট করেছে। আর সীমাহীন হক নষ্টের শাস্তি সীমাহীন হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
উল্লিখিত আলোচনার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আমরা আকিদা বিশুদ্ধ করব। সাতটি বিষয়ের ওপর ইমান আনা জরুরি; যা ইমানে মুফাসসালে