বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্রই ছিল 'গণতন্ত্র'। স্বাধীনতা অর্জনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সকল স্তরের জনগণের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও এর একক কৃতিত্ব দাবি করে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ। তাদের গণতন্ত্রের বুলি যে পুরোপুরিই একটি প্রতারণা ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনই তারা দখল করে নেয়। এই দখল স্বত্বকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ওই সময়ের জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ থেকে সকল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে নির্মূল করা হয়। এখানেই থেমে ছিলেন না শেখ মুজিব। ১৯৭৫ সালে একদলীয় 'বাকশাল' প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি বহুদলীয় ব্যবস্থা, তথা 'গণতন্ত্রকে' কবরস্থ করে প্রমাণ করেন যে, তার বিশ্বাসে, চিন্তা ও মননে এবং চরিত্রে কখনো গণতন্ত্র ছিল না। তিনি তার দলের নেতাকর্মীদেরও তার ছাঁচেই গড়ে তুলেছিলেন, যারা কোনো প্রশ্ন না তুলে 'এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ' ধ্বনি দিয়ে তাদের নেতাকে দেবতুল্য রূপ দিতে চেষ্টা করেছেন। শেখ মুজিব এত ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিলেন যে, তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো শক্তি দেশে আর অবশিষ্ট ছিল না। কিন্তু গ্রিক পৌরাণিক কাহিনির 'ফিনিক্স' পাখির মতো ধ্বংসস্তুপ থেকে জীবিত হওয়ার মতো জেগে ওঠে এক শক্তি এবং শেখ মুজিবের দানবীয় শাসনের অবসান ঘটায় তাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। ক্ষমতার দাপটে বাড়াবাড়ি করার এই নির্মম পরিণতিই আওয়ামী লীগের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যথেষ্ট ছিল।
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ১৯৫৪ সালে শেরপুর জেলায় জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স। ১৯৭৭ সালে সাংবাদিকতা শুরু। ১৯৮৩ সালে বার্লিনে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ জার্নালিজম থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা। ১৯৮৮-৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৯২-৯৩ সালে দিল্লিতে ইন্সটিটিউট অফ কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ-এ সাংবাদিকতায় উচ্চতর পড়া- শোনা। ১৯৯৮ সালে ফিলিপাইনের র্যামনম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড-এর নমিনেটর ছিলেন। পেশাজীবনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বার্তাসংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এবং বেশ কয়টি জাতীয় দৈনিকের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬০টির অধিক গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন।