ফেলে আসা সত্তর দশকের শেষভাগ৷ এমার্জেন্সির পরে দেশে- রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে, সামাজিক মূল্যবোধ বদলে যাচ্ছে, টেলিভিশন ঢুকে পড়েছে সদ্য সদ্য, লোডশেডিং নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা৷ কিন্তু তখনও মেগাসিরিয়াল আসেনি, আসেনি ডিজিটাল যুগ৷...হারিয়ে যাওয়া সময়, হারিয়ে যাওয়া শহর কলকাতা৷ উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন একজন মহিলা৷ যশোধরা৷ তিনি একইসঙ্গে মা, স্ত্রী, বউমা৷ দশভুজা৷ তবে এই উপন্যাসের প্রধান নায়ক সময়৷---হ্যাঁ, সময়ই এই বিশাল বিস্তৃত কাহিনির মূল উপজীব্য৷ যেখানে দাঁড়িয়ে নানা সম্পর্কগুলো টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জীবন্ত হয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছে৷ যশোধরার সঙ্গে তার শ্বশুর-শাশুড়ির ভালোবাসা-ঘৃণা, আহ্লাদে বখে যাওয়া দেওর, আবার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের ওঠাপড়া ছড়িয়ে আছে৷ পাড়া কালচার তখনও পুরোনো কলকাতার অঙ্গ৷ সেখানে আবার গড়ে উঠছে তথাকথিত অবৈধ সম্পর্ক৷...যশোধরা মানতে পারছেন না৷ যেমন, যশোধরা প্রবল ধাক্কায় কেঁপে উঠছেন, যেদিন জানছেন তার ছেলে বিয়ে করতে চায়, বয়সে বড় নিজের শিক্ষিকাকে৷ তাঁর আজন্মলালিত সংস্কার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, যখন
দেখেন আদরের কন্যা প্রেমে পড়েছে মুসলমান যুবকের৷...শেষপর্যন্ত কী পরিণতির দিকে এগিয়ে চলে কাহিনি?...কোন সুতোয় গ্রন্থিত হয় ‘বসবাস’? মন্দাক্রান্তা সেনের এই বিশাল উপন্যাস আক্ষরিক অর্থে হয়ে এক চিরকালীন ক্লাসিকস৷ যার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে মাধূর্য, প্রেম-বিরহ, অশ্রু ও আনন্দ৷
মন্দাক্রান্তা সেন (জন্ম ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭২ সালে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ) একজন ভারতীয় কবি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন কিন্তু স্নাতক হবার আগেই সাহিত্যের প্রতি আরও মনযোগী হতে চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই তিনি তার শিক্ষায় ইতি টানেন। কবিতার বই ছাড়াও তিনি তার মাতৃ ভাষায় প্রচুর ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শ্রুতি নাটক প্রকাশ করেছেন। তিনি সর্বকনিষ্ঠ কবি যিনি ১৯৯৯ সালে ‘আনন্দ পুরস্কার‘ পান মাত্র ২৭ বছর বয়সে। ২০০৪ সালে তিনি ‘ভারতীয় সাহিত্য আকাদেমি ‘ থেকে ‘ সুবর্ণজয়ন্তী ইয়ং রাইটার্স পুরস্কার ‘ লাভ করেন। ২০০৬ সালের বসন্তে তিনি জার্মানির লিপজিগ বইমেলায় অসংখ্য কবিতা পাঠ করেন এবং সেই বছরেই অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও একই ভাবে কবিতা পাঠ করেন।