Category:চিরায়ত উপন্যাস
"কৃষ্ণকান্তের উইল" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ দুখণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে একত্রিশটি এবং দ্বিতীয় খণ্ডে পনেরটি পরিচ্ছেদ। উপন্যাসের শেষ হয়েছে পরিশিষ্ট-এ। মােট সাতচল্লিশটি পরিচ্ছেদ উপন্যাসে অবিরামভাবে এগিয়েছে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে দেখা যায়, হরলাল ব্রহ্মানন্দের সঙ্গে মিলে একটা চক্রান্ত করছে। উইল জাল, হাত সাফাই, ঘুষের টাকা প্রভৃতি উপাদান ব্যবহার করে যেন একটা উত্তেজক ও রহস্যময় কাহিনী দানা বাঁধিয়ে তােলা হয়েছে। গল্পে আকর্ষণ তৈরি করা হয়েছে।
তৃতীয় পরিচ্ছেদে এই রহস্যপ্রসঙ্গের সূত্র ধরেই উপন্যাসিক রােহিনী চরিত্রের অন্ধকার তলদেশে নামার সিঁড়ি পেয়েছেন। উপন্যাসের মুখ্য নারী চরিত্র রােহিনী। কিন্তু উপন্যাসে তার প্রথম উপস্থাপন মুহূর্তটিকেও বিশেষভাবে চিহ্নিত করেন নি লেখক। রােহিনীর প্রাথমিক পরিচয় কতকটা কৌতুকের লঘুসুরে বাঁধা। যার রূপ নিয়তির মতাে তার রূপ বর্ণনা অনুপস্থিত। হরলালের ষড়যন্ত্রের পালা চলছে। ব্রহ্মানন্দ বিফল হয়েছে। রূপসী রমণীর কামনাকে ধূমায়িত করে তুলে হরলাল উদ্দেশ্য সিদ্ধির অর্থাৎ উইল বদলাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু রােহিনীর ব্যক্তিচরিত্রের দু’একটি গুণ্ঠিত স্তর প্রকাশ করায় কাহিনীর এই অংশ শুধু বাইরেই পড়ে থাকে নি— সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য ব্যাপার হল রােহিনীকে প্রাথমিকভাবে প্রকাশ করতে গিয়ে যে পদ্ধতি এখানে অবলম্বিত হল বঙ্কিমের অন্য কোনাে উপন্যাসে তা দেখা যায় না। রােহিনীর উইল বদলে রাজী হওয়া এবং অর্থ গ্রহণে অসম্মতি স্বল্পোচার বাক্যার্ধ মাত্র। কিন্তু তার প্রবৃত্তির আলােড়ন, বৈধব্যে অনীহা, কামনা-বাসনা-ভােগময় জীবনের প্রতি লােভ এর মধ্যে ধরা পড়েছে। চতুর্থ পরিচ্ছেদে রােহিনী-কৃষ্ণকান্তের সাক্ষাতে লঘু রসিকতার যে জাল বােনা হয়েছে তা অকারণ নয়। এর মধ্যে দিয়ে রােহিনী উইল রাখার স্থানটি জেনে নিল। এরূপ বিপজ্জনক পদ্ধতি রােহিনীকে আরাে বেশি করে চিনিয়ে দেয়। তার তীব্র অন্তরাবেগ শুধু বিবেক অতিক্রম করে যায় না। কার্যসিদ্ধির সবচেয়ে সাহসিক পন্থার ঝুঁকি নিতে তাকে অনায়াসে দ্বিধাহীন করে তােলে।
Report incorrect information