এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন সিরাজ রেডি ছিল, ঢাকা পালাবে। ফেল করার ভয় ছিল। অঙ্ক ও ইংরেজি দুটোই খারাপ হয়েছে। ক্লাস টেন পর্যন্ত স্কুলে যত পরীক্ষা দিয়েছে, এ দুই সাবজেক্টে পাসের চেয়ে ফেলই করেছে বেশি। এসএসসি একচাসে পাসের জন্য বিশেষ কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে চেয়েছিল। বাবা টাকা দিতে পারেনি। ক্লাসের ভালো ছাত্ররাও এ-প্লাস পাওয়ার জন্য প্রাইভেট-কোচিং-গাইড কত কী পড়ে।
আর কোনোমতে টেনেটুনে পাস করা সিরাজ শুধু নিজের চেষ্টায় আর কত আগাবে? ক্লাসের চিহ্নিত খারাপ ছাত্র হিসেবে খারাপ পরীক্ষা দেওয়ায় ফেলের ভাগ্য মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি হয়েই ছিল সে। স্কুলের টেস্টেও অ্যালাউ হয়নি সিরাজ। কিন্তু ছেলে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেবে বলে বাবা ফরম ফিলাপের টাকাটাও জোগাড় করে ফেলেছিল আগেভাগেই। মা তার একমাত্র পোষা ছাগলটা বিক্রি করে দিয়েছে। হেডমাস্টার প্রথমে আক্ষেপ করে বলেছিল, খামোখা গরিব বাপের টাকা নষ্ট করবি কেন?
বাপের টাকা ধ্বংসের চেয়েও ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়াটাই ছিল সিরাজের কাছে বড় ব্যাপার। হেডস্যারকে মিছেমিছি পাস করার গ্যারান্টি এবং দিনে ২৫ ঘণ্টা পড়ার আশ্বাস দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত গরিবের ছেলে বলে দয়া করেছিল হেডমাস্টার। ভালোয় ভালোয় সব পরীক্ষা দিতে পেরেই মহা খুশি সিরাজ। পরীক্ষার পরই বাবা শেষ কথা বলে দিয়েছে। পাস করলেও সিরাজকে পড়ার জন্য আর একটা টাকাও দেবে না সে। চাকরি খুঁজতে ঢাকা যেতে হবে।