জন্মেছিলেন পঞ্চাশ দশকের বরিশালে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঐ মফস্বল শহরেই। তারপর লেখাপড়া ও কর্মসূত্রে বাস করেছেন নানান শহরে এবং ঘুরেছেন নানান দেশে। কিন্তু কখনও ভোলেননি বরিশালকে- যে শহর তাঁর হৃদয়ে গাঁথা হয়ে গিয়েছে স্বপ্নের ও স্মৃতির শহরে। তাঁর স্মৃতির শহরকে তিনি দেখেছেন তাঁর শৈশব আর কৈশোরের চোখ দিয়ে। সে স্মৃতিতে উঠে এসেছে কিছু মায়াময় ঘটনার কথা, কিছু অনন্যসাধারণ মানুষের কথা, তাঁর পারিপার্শ্বিকতার কথা। বড় মমতার সঙ্গে এক স্বাদু গদ্যে তিনি লিখেছেন সে সব কথা। তাঁর বর্ণনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে সেই সময়টিও। সব কিছুর সঙ্গে তিনি ধরেছেন পঞ্চাশ-ষাটের দশকের সময়কেও। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যাঁদের বড় হয়ে ওঠা সেদিনের বরিশালে, তাঁরা এ গ্রন্থস্থিত লেখাগুলোর সঙ্গে একটি একাত্মতা খুঁজে পাবেন। যাঁরা বরিশালের বাইরের, তাঁদের কাছেও এ সব লেখার প্রাসঙ্গিকতা অনেক। কারণ সে সময়ে বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোর যাপিত জীবনের ধারার অভিন্নতা লক্ষ্যণীয়। স্মৃতির তাড়না থেকে নয়, বরং স্মৃতির চালনা থেকে উদ্ভূত এ সব লেখা থেকে বর্তমান ও ভদেশে-বিদেশে ড. সেলিম জাহানের পরিচিতি একজন কৃতবিদ্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে। কিন্তু তাঁর রয়েছে একজন কথাশিল্পীর চোখ আর সংবেদনশীল মন। লিখতে পারেন খুব কাব্যিক আর আকর্ষক গদ্য, পাঠককে যা সহজে টেনে নেয়। এ বইয়ে তিনি ফিরে গেছেন তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতির শহর বরিশালে এবং তুলে ধরেছেন তাঁর হিরণ্ময় স্মৃতি, যা অন্যদেরও স্মৃতিমেদুর করে তোলে।বিষ্যৎ প্রজন্ম অতীতের জীবন ও জগৎ সম্পর্কে একটি বড় মায়াময় গুরুত্বপূর্ণ চালচিত্র পাবেন।
সেলিম জাহান জন্ম ১৯৫১ সালে বরিশালে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে পড়াশোনা যথাক্রমে বরিশাল জিলা স্কুল ও বিএম কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনের শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে। পরে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন বর্তমানে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তরের পরিচালক। ইতিপূর্বে বিশ্বব্যাংক, আইএলও, ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এ যাবৎ প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি, অর্থনীতি-কড়চা, শার্সিতে স্বদেশের মুখ, Freedom for Choice, Development and Deprivation and Overcoming Human Poverty.