ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ‘দেওবন্দ আন্দোলন’ ভারত ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অথচ প্রচলিত ইতিহাসগ্রন্থ ও পাঠ্যপুস্তকে এই আন্দোলনের ব্যাপারে খুব একটা উল্লেখ পাওয়া যায় না। কিছু উদারপন্থী ইতিহাসবিদের লেখা থেকে যেটুকু পাওয়া যায় তাও খুবই সামান্য। অথচ ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় এই আন্দোলনের কর্ণধাররা ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। এই রক্তমাখা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল দারুল উলুম দেওবন্দ শিক্ষাকেন্দ্র। সেজন্য অনেকে এই আন্দোলনকে 'দেওবন্দ আন্দোলন' বলে উল্লেখ করেছেন। ইতিহাসবিদ সত্যেন সেন দেওবন্দ শিক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে বলেছেন, “দেওবন্দ শিক্ষাকেন্দ্র ও আলিগড় শিক্ষাকেন্দ্র এই উপমহাদেশের মুসলমানদের কাছে বিশেষ পরিচিত। অবশ্য আজকালকার দিনের শিক্ষিত তরুণ মুসলমানেরা আলিগড়ের নাম সেভাবে জানে দেওবন্দ এর নাম তেমন কউই জানে না। হিন্দুদের পক্ষে একথা সত্য, আলিগড়ের কথা তারা অনেকেই জানে কিন্তু দেওবন্দের কথা খুব কম লোকেই জানে। অথচ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে দেওবন্দ শিক্ষাকেন্দ্র যে দেশপ্রেমিক ভূমিকা গ্রহণ করে এসেছে, সে জন্য হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলের কাছেই তা স্মরণীয় থাকা উচিত ছিল।”
যাইহোক ভারতের ইতিহাসে দেশকে ব্রিটিশ বেনিয়াদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য দেওবন্দের কী অবদান তা পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্য এই গ্রন্থের অবতারণা। স্বভাবতই এই গ্রন্থটি ইতিহাসপ্রেমিক চিন্তাশীল পাঠক-পাঠিকার প্রাণ স্পর্শ করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
Title
দেওবন্দ আন্দোলন : ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটি মর্মান্তিক অধ্যায়
মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম এই প্রজন্মের তরুন প্রগতিশীল লেখকদের মধ্যে একজন উদীয়মান লেখক। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের ‘রাঙামাটির দেশ’ নামে পরিচিত বীরভূম জেলার শালজোড় গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাঙালী কৃষক পরিবারে। মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের একজন উল্লেখযোগ্য প্রাবন্ধিক, কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, গবেষক ও প্রগতিশীল চিন্তাবিদ। তিনি দুমকা ‘সিধু কানহু মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ২০১২ সালে ভুগোলে অনার্স নিয়ে বিএ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ২০১৩-১৪ সালে তিনি হরিয়ানার রোহতাকে অবস্থিত কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড সমাপ্ত করেন। ২০১৭ সালে তিনি ভুগোলে এমএসসি করেন। লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই ২০১০ সালে ‘ইতিহাস বিকৃতির প্রয়াস…’। এই বইটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক শ্রেণীর ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আক্রোশের শিকার হন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলাও করা হয়। এমনকি লেখককে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বইটি লিখিতভাবে তুলে নিলে এলাকা ক্ষান্ত হয়। এরপরেও দমে যাননি মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম। প্রচণ্ড জেদের বশে কলম চালিয়ে যান। লেখক ব্যাক্তিগতভাবে বিজ্ঞানের বিষয়ে স্নাতকোত্তর হলেও তাঁকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে ইতিহাস। সেজন্য তিনি ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ও ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতেই বেশী ভালবাসেন। এছাড়াও যে কোনও সৃজনশীল কাজে তাঁর উৎসাহ রয়েছে। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন প্রথম সারির সাময়িকী পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা ও লেখালেখি করেন। ২০১৮ সালে তাঁর প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘সিরাজুদ্দৌল্লা’ প্রকাশিত হয় ‘দেশ প্রকাশণ’ থেকে। বইটি রীতিমত পাঠক মহলে সাড়া পড়ে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘সিরাজুদ্দৌল্লা’ (২০১৮), আকবরঃ এক ব্যতিক্রমী মুঘল (২০২২), শাহজাদা আওরঙ্গজেব (২০২২), বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে (২০২২), দেওবন্দ আন্দোলনঃ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটি মর্মান্তিক অধ্যায় (২০২২), নগ্নকাল (২০২২)।