ইংকার যে কালিতে আঁকেন ভাবনার রেখা, মেহেদী সেই রঙে রাঙিয়ে দেন জীবন। এই দুই সত্তার মিলনে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন কল্পনা ও বাস্তবতার সংযোগরেখায়―যেখানে ভাষা কেবল অর্থ বহন করে না, বরং আত্মার প্রতিধ্বনি হয়ে প্রতিফলিত হয় প্রতিটি শব্দে।
কেউ বলে, তিনি লেখেন। কিন্তু তাঁর নিজস্ব স্বীকারোক্তি অন্যরকম―তিনি লেখেন না, লেখা নিজেই তাঁর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীর মতো। তিনি কেবল সেই দ্বারটি উন্মোচন করেন, যেখান দিয়ে শব্দেরা এসে জন্ম নেয়, নিঃশব্দে বিলীন হয় সময়ের গর্ভে।
ইংকার মেহেদীর সাহিত্যজন্ম ঘটেছে শব্দের জগতে, কিন্তু তাঁর প্রকৃত জন্ম যশোর জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম আন্দুলিয়ায়। স্বপ্ন ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হওয়ার, কিন্তু নিয়তি তাঁকে নিয়ে এসেছে চার্টার্ড সেক্রেটারির মর্যাদায়। এক বসাতেই স্কলারশিপসহ আইসিএসবি হতে সিএস পাশ করেন তিনি। মফস্বলের সাধারণ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি-তে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য অর্জন করেন বোর্ড বৃত্তি। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন।
তিনি ছিলেন বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠন)-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জোনের সভাপতি এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা, পাশাপাশি চৌগাছা ছাত্রকল্যাণ সমিতি ও MIS WEB-এরও সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিষ্ঠা ও আবেগের মিশেলে।
চতুর্থ শ্রেণিতে “চাঁদে মানুষ” শিরোনামে একটি রচনার মাধ্যমে তাঁর লেখালেখির যাত্রা শুরু। কলেজ জীবনে “ঘটকের প্রেম” ও “তোমারই অপেক্ষায়...” গল্পদুটি তাঁকে স্থানীয় পত্রিকায় পরিচিত লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের সৃজনশীল ‘মাস্টার রাইটার’ হিসেবে যুক্ত হয়ে তিনি অসংখ্য বই, গাইড ও মেইড ইজি রচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর লেখা ‘বিজনেস মেরিট’ ও ‘অ্যাকাউন্টিং মেরিট’ ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। এছাড়া বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত তাঁর ৮টি প্রবন্ধ পাঠকমহলে পেয়েছে সমাদর।
তিনি আত্মউন্নয়নমূলক ‘TAME Series’-এর স্রষ্টা যেখানে মোট ১১টি বই রয়েছে। এর মধ্যে ‘Tame Your Time’, ‘Tame Your Habit’ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। শৈশবে এক শিক্ষক তাঁকে বলেছিলেন, “বারুদ যেখানে থাকবে, সেখানেই বিস্ফোরিত হবে।” কিন্তু ইংকার মেহেদী বিস্ফোরিত হতে চান না। তিনি চান, অসংখ্য মানুষের ভালোবাসাকে কালি করে—শব্দের মাধ্যমে কথা বলতে, মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে, নীরবের ভেতরে উচ্চারিত হতে।
বর্তমানে তিনি এইচআর প্রফেশনে কর্মরত, তবু লেখালেখির প্রতি তাঁর নিত্য সাধনা অব্যাহত। নিজের সাফল্যের বিচার তিনি পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন―কারণ তাঁর কাছে লেখা কোনো অর্জন নয়, বরং এক অন্তর্লীন তপস্যা।