"জননী" বইটি সম্পর্কে কিছু কথাঃ
শক্তিমান এই লেখকের অমর কীর্তি জননী নামের মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। এটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস, যা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। শ্যামা নামে এক গৃহবধূর জননী সত্ত্বার বহুবিধ আত্মপ্রকাশ এই উপন্যাসের উপজীব্য। উপন্যাসে লেখক জননী চরিত্রটিকে স্বর্গীয় বা দৈবিক মহিমায় ভাস্বর করেননি। বরং এক জননীর কাহিনী বাস্তবতার আয়নায় তুলে ধরেছেন। উপন্যাস বললে বরং ভুলই হবে, এ যেন প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চিরন্তন ঘটে যাওয়া মানব জীবনের চক্রেরই স্বার্থক খণ্ডচিত্র।
উপন্যাসের মূল চরিত্র শ্যামা, যাকে ঘিরেই উপন্যাসের আবর্তন; এছাড়া শীতল, বিধান, বকুল, রাখাল, মন্দা এবং আরও অনেকে, যারা প্রেক্ষাপটের প্রয়োজনে হাজির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উপন্যাসে। উপন্যাসে শ্যামার কিশোরী বধূ থেকে যেমন পুরোদস্তুর গৃহবধূ হওয়ার কাহিনী আছে, তেমনি তার জননী হয়ে ওঠা, আবার জননীর রিলে বাটনটা হস্তান্তরের গল্পও তুলে ধরা হয়েছে সুনিপুণভাবে। এছাড়া সংসারে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন, মানসিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক টানাপোড়েন, স্বার্থপর-স্বার্থহীন সম্পর্ক, মানুষের চারিত্রিক রহস্যময়তা, বাস্তবতার কাছে স্বপ্নের পরাজয়ের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে নিপুণ দক্ষতার সাথে।