শার্লক হোমস

ভূমিকা

শার্লক হোমস্!

এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা !

এই গোয়েন্দা সম্পর্কে অদ্ভুত সব বিচিত্র রোমাঞ্চকর কাহিনী পড়তে পড়তে পাঠক প্রায়শঃই তাকে রক্তমাংসের জীবন্ত মানুষ বলেই মনে করেন। শার্লক হোমস্ কিন্তু সত্যিকারের কোন জীবন্ত মানুষ নন। অমর কথা-সাহিত্যিক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের সৃষ্ট এক আশ্চর্য গোয়েন্দা চরিত্র এই ভুবনবিজয়ী ব্যক্তিত্বপূর্ণ পুরুষ শার্লক হোমস্। কিন্তু মজার কথা এই যে এই কাল্পনিক চরিত্রটির ক্রিয়াকলাপ এত বেশি প্রাণবন্ত যে অসংখ্য পাঠক-পাঠিকা তাঁকে সত্যিকারের জীবন্ত মানুষ বলেই ভেবে নিয়েছেন। একবার হোমস্-এর গুণমুগ্ধ ভক্তের দল দলবেঁধে ছুটে গেছেন বেকার স্ট্রীটে এই গোয়েন্দা-শ্রেষ্ঠকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে। সারা বেকার স্ট্রীট তন্ন-তন্ন করে খুঁজে হোমস্ বা তাঁর সেই বিখ্যাত বাড়ির সন্ধান না পেয়ে দিনের শেষে হতাশ হয়ে তাঁরা ফিরে গিয়েছিলেন তাঁদের ঘরে।

কোনান ডয়েল শার্লক হোমস্‌কে অশেষ গুণের আধার করে গড়ে তুলেছেন। হোমস্- এর পড়াশুনা যথেষ্ট। এমন কোন বিষয় নেই যা তিনি জানেন না। সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক—যে কোন বিষয়ে যে কোন সমস্যা আসুক না কেন, তিনি তার সহজ সমাধান করে দিতে পারেন। তিনি অবসর সময় কাটান ইতিহাস বা বিজ্ঞানের চর্চা করে; কখনও বা ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে, আবার কখনও বা তাঁর প্রিয় বেহালাটিকে সঙ্গী করে। কখনো কখনো কসাইয়ের দোকানে গিয়ে শূকরের দেহ বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তিনি বিশেষ কোন সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। শার্লক হোমস্-এর মত বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ একজন মানুষের মধ্যে সত্যিই বিরল।

শার্লক হোমস্-এর উপস্থিত বুদ্ধির কোন তুলনা নেই। যে কোন মানুষকে দেখামাত্র তিনি তার সম্পর্কে সব কিছু বলে দিতে পারেন। কার্যকারণ সূত্র মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তিনি সব কিছু বলেন। মানুষের মনের গহনে তিনি সহজেই পৌঁছতে পারেন। গোয়েন্দাগিরি তাঁর জীবিকা, কিন্তু এই জীবিকাকে তিনি বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি তাঁর গোয়েন্দাগিরির নৈপুণ্যকে মানুষের কল্যাণের কাজে নিয়োগ করেছেন। যারা মানবজাতির শত্রু, তাদের তিনি রেহাই দেন না। মোরিয়ার্টর মতো বুদ্ধিমান বা বোহেমিয়ার নরপতির মতো বিত্তবান ঘাতকদেরও তিনি ক্ষমা করেন না। কিন্তু মানুষের কল্যাণের জন্যে যারা হত্যা করেছে, তাদের তিনি আইনের নাগপাশে বেঁধে ফেলতে কখনও চাননি। এইজন্যই হয়তো তিনি হয়েছেন শখের গোয়েন্দা মাত্র। তা মামলার কিনারা করবার পর তার বাহাদুরী নেবার ভার নির্দ্বিধায় তুলে দিতে পেরেছেন অন্যের হাতে।

স্যার আর্থার কোনান ডয়েল এই অদ্ভুত গোয়েন্দার বিচিত্র কীর্তি-কলাপ বর্ণনা করে ছাপ্পান্নটি গল্প লিখেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি গল্প কিশোরদের উপযোগী করে আমরা এবার বাংলার কিশোর-কিশোরীদের হাতে তুলে দিচ্ছি। তাদের কাছে এই গল্পগুলি সমাদর পেলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।

দেব সাহিত্য কুটীর