32 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
TK. 501TK. 431 You Save TK. 70 (14%)
আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
Related Products
Product Specification & Summary
‘লেখকের কথা
সবদিক ভেবে দেখলে ‘একাত্তরের জননী’ আমি নিজেই। পাক হানাদার বাহিনী আমাকে প্রাণে না মারলেও আমার আত্মার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে, যার ফলে নেমে এসেছে জীবনে শোচনীয় পরিণতি। আমার দু’টি মুক্তি পাগল অবোধ শিশুর সাধ- স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ভরা জীবন কেড়ে নিয়েছে বাংলার মু্ক্তিসংগ্রাম। ছয় বছর পরে যে শিশুটি এসেছিলো সেটাও সীমাহীন দুঃখ কষ্ট সয়ে অকালে মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য হলো। আমি আজ তিন শহীদের ভাগ্য হত্যা (ভাগ্য বিড়ম্বিত) অযোগ্য গর্ভধারিণী। আমার সকল দুঃখ-দুর্দশারই মূলে রয়েছে সে একাত্তর। আমার কাঁধে ঝোলা ,খালি পা ও দুঃসহ একাকীত্ব একাত্তরেরই অবদান। বায়াত্তরের প্রথমেই আমি বাধ্য হয়ে শুরু করেছি যত্র-তত্র যার তার ঘরে গিয়ে সামান্য পরিশ্রমিকেই গৃহশিক্ষকতা। সাধ্যাতীত ও সীমাহীন পরিশ্রমের ফলে আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম দূরারোগ্য ব্যাধিতে। এরই মধ্যে আমি শারীরিক ও মানসিক অশেষ কষ্ট সহ্য করে চা’র বছরের সাধনায় একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে পাইলট পরিকল্পনার আওতাভূক্ত করেছিলাম। আজ সুদীর্ঘ বত্রিশ বছর ধরে আমি বেকার জীবন যাপন করছি। বছর বিশেক লেখ্যবৃত্তি নিয়েই আছি। কাঁধে বই এর ঝোলা নিয়ে নিজের লেখা বই ফিরি করেই আর্থিক সমস্যার সমাধানে রত রয়েছি।
আমার জীবনের এই দুঃসহ কষ্ট-যার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল সেই উনিশ শ’ একাত্তর সালের তেরোই মে। সেই কষ্ট-বীজ আজ বিষাদের পাখা মেলে আকাশ ছুঁতে চাচ্ছে। আমি যেন দাঁড়িয়ে আছি নীলকণ্ঠী বিষাদময় প্রস্তরমূর্তির মত। আমার এই জীবন যাপন, আমার এই অমানিশার কাল, আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খুঁটিনাটি এই গ্রন্থের বিবর্ণ সোপান।
আমার এই জীবন, যা ছিল কুসুমাস্তীর্ণ এক সম্ভাবনার অবিরল ধারা, সেই কুসুম কোমল জীবনধারারে অতর্কিতে যে কন্টক বিষ বিঁধেছিল তা আমাকে করেছে বিবর্ণ,, বিপর্যস্ত এবং বিধ্বস্ত। আমি হয়েছি পথহারা, উদ্দেশহীন, বিভ্রান্ত-পথিক। তবু এই জীবন আমি ভালবাসি। ভালবাসি আমার বাংলা মাকে, বাংলাভাষাকে এবং বাংলাদেশকে। তাই, বেঁচে আছি, বেঁচে থাকি, যদি একদিন এই ভালোবাসাময় বাংলাকে সত্যিকার স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিতে পারি এই আশায়।
আমার এই আত্মজৈবনিক গ্রন্থ, ‘একাত্তরের জননী’র প্রথম খণ্ড আজ পাঠকের দরবারে হাজির করলাম। সহৃদয় পাঠকের প্রেরণা ও উৎসাহ পেলে এই গ্রন্থ দশ খণ্ড পর্যন্ত লেখার এবং প্রকাশের আশা রাখি।
রমা চৌধুরী, লুসাই ভবন, চট্রগ্রাম