দ্বীন নিয়ে অজ্ঞতা আমাদের সমাজের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমা অপসংস্কৃতি, স্বাধীনতার নামে নানান বুলি আর আদর্শের যাঁতাকলে দ্বীন আজ মুসলিম ঘরের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েদের কাছে সেকেলে। এই আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে আমাদের মেয়েরা। ইসলাম সম্পর্কে, ইসলাম যে জীবন তাদের দিয়েছে তা সম্পর্কে আমাদের মেয়েদের জানাশোনা ভয়ংকর রকম কম। কোনো পাবলিক কিংবা প্রাইভেট ভার্সিটিতে যান, সেখানে ১০০ জন মেয়ের সাথে যদি আপনি ১০ মিনিট করে কথা বলেন ইসলামে নারীর অবস্থানের ব্যাপারে, ৯৫ জনের মাঝে কোনো না কোনো পয়েন্টে বিভিন্ন মাত্রার ইরতিদাদ দেখতে পাবেন। দেখবেন কোনো একটা বিষয়ে হয় কুরআনের আয়াতকে, না হয় স্পষ্ট কোনো হাদিসকে সে হয় অস্বীকার করছে, না হয় এ যুগে অচল বলে মন্তব্য করছে। তাদের অনেকেই ইসলামকে পুরুষতান্ত্রিক ও সেকেলে, আর পশ্চিমা সভ্যতাকে আধুনিক ও নারীবান্ধব বলে মনে করে। খুব স্বাভাবিক। ঘরে মায়ের নিগৃহীত জীবন আর টিভিতে পশ্চিমের বাঁধনহারা জীবন দেখতে দেখতে সে বড় হয়েছে। তুলনা করেছে। দুটোর কারণই তো আমরা পুরুষরা। মোদ্দাকথা হল আমরা পারিনি এবং করিনি। ফল হিসেবে চোখ ধাঁধানো শিশিরবিন্দুতে ধোঁকা খেয়ে পশ্চিমা মাকড়সার জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ছটফট করছে আমাদের প্রজাপতিরা। সেই পুরুষজাতিগত অপরাধবোধ থেকেই ডা. শামসুল আরেফীন বইটি লিখেছেন। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড এর দ্বিতীয় পর্ব। লেখক এ বইতে দেখাতে চেষ্টা করেছেন পশ্চিমা সমাজের সাথে ইসলামের আদর্শিক দ্বন্দ্বটা কোথায়, কেন সবাই পশ্চিমের সাথে একাকার হতে পারছে, আর ইসলাম পারছে না। এছাড়া দেখাতে চেয়েছেন ইসলামের ব্যবহারিক প্রয়োগটা কেমন ছিল। পশ্চিমা আদর্শের ইতিহাস আর ইসলামের ইতিহাসের একটা তুলনামূলক চিত্র পাঠক পাবেন।
বাংলাদেশের জনগণের বেশিরভাগই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিজেদের ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় নানাবিধ পড়াশোনার। আর বিস্তৃত এই পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে গবেষণা ও আলোচনা নিয়ে এবং বিভিন্ন ইসলামি আদর্শ ও মতবাদমূলক বই রচনা করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন ডা. শামসুল আরেফীন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী হলেও একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামি আদর্শে বলীয়ান হয়ে তিনি রচনা করেছেন বেশ কিছু ইসলাম সম্পর্কিত বই, যেগুলোর কোনোটি রচিত হয়েছে গল্পের আকারে, আবার কোনোটি রচিত হয়েছে প্রবন্ধ হিসেবে। ইসলাম বিষয়ক এই লেখক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৯ সালে। সাদামাটাভাবে জীবন পার করা শামসুল আরেফীন শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেছেন ক্যাডেট কলেজে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ডা. শামসুল আরেফীন এর বই এদেশীয় মুসলমানদের মাঝে লাভ করেছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ডা. শামসুল আরেফীন এর বই সমূহ-তে ইসলামি মতবাদ ও আদর্শ প্রকাশের পাশাপাশি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং ইসলামের বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের ইসলামি ব্যাখ্যা ও ইসলামি উপায়ে চলার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিধানও উঠে এসেছে তাঁর বইগুলোতে। ডা. শামসুল আরেফীন এর বই সমগ্র এর মাঝে 'কষ্টিপাথর', 'ডাবল স্ট্যান্ডার্ড', 'মানসাঙ্ক' ইত্যাদি অন্যতম। মানুষকে দিনের শেষে সৃষ্টিকর্তার দেয়া সমাধানের পথেই ফিরে আসতে হবে- এ কথাই ফুটে ওঠে তার রচিত বইগুলোতে।