আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
ভালো থাকুন, সৃজনশীল থাকুন
---------------------------
মাসুদুল হক
ইউরোপে গার্হস্থ্য কবিতার একটি স্বতন্ত্র ধারা বহু আগেই সূচিত হয়েছিল। এই কবিতা মূলত ঘরোয়া জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক, নারীর অভিজ্ঞতা, মাতৃত্ব, রান্নাঘর, প্রেম ও সন্তান প্রতিপালনের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভিক্টোরিয়ান যুগের ইংল্যান্ডে এই ধারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং প্রেম ও দাম্পত্য সম্পর্কের গার্হস্থ্য দিক তুলে ধরেছেন, ক্রিস্টিনা রোসেট্তি লিখেছেন নারীর অন্তর্দ্বন্দ্ব ও গৃহজীবনের দ্বন্দ্বময় সত্য নিয়ে। জার্মান রোমান্টিক ও পোস্ট-রোমান্টিক যুগে আনেতে ফন দ্রোস্তে-হ্যুলশফ নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পারিবারিক জীবনের সূক্ষ্ম অনুভব প্রকাশ করেন। এরপর ফরাসি সাহিত্যে মার্সেলিন দেশবোর্দ-ভালমোর গার্হস্থ্য ও ব্যক্তিগত অনুভূতিকে কবিতার কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসেন।
বিশ শতকে এসে গার্হস্থ্য কবিতা হয়ে ওঠে রাজনৈতিক এবং নারীবাদী এক ভাষ্য। সিলভিয়া প্লাথ তার “গড়ৎহরহম ঝড়হম” বা “ঞযব অঢ়ঢ়ষরপধহঃ”-এ মাতৃত্ব ও নারীর অভ্যন্তরীণ সংগ্রামকে তুলে ধরেন। ক্যারল অ্যান ডাফির কবিতায় আধুনিক নারীর ঘরোয়া অভিজ্ঞতা, প্রেম এবং সামাজিক ভূমিকার জটিলতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। ইউরোপে এই ধারাটি এখন এক শক্তিশালী সাহিত্যভাষা, যা নারীর অভিজ্ঞতা, পরিবার, সমাজ ও আত্মচেতনার সংলগ্নতায় গড়ে উঠেছে—কখনও কোমল, কখনও তীব্র।
আমাদের দেশেও গার্হস্থ্য কবিতা লেখা হয়েছে, তবে তা অবহেলিতই থেকেছে। আমরা কবিতার গঠন ও শৈলীর মূল্যায়নে এতটাই নিমগ্ন থেকেছি যে, কবির জীবনবোধ ও অভ্যন্তরজগতের প্রকাশকে উপেক্ষা করেছি। প্রথার বাইরে কোনো চিন্তা বা অনুভবকে মর্যাদা দিতে কুণ্ঠা বোধ করেছি। অথচ সেখানেই খোঁজ মেলে এক নতুন সম্ভাবনার।
এই সম্ভাবনাকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম জুলেখা উসমানী জেলী(১৯৪৮)-র ‘অনুরণন’ কবিতাগ্রন্থে। কবিতাগুলো হয়তো কোনো জটিল দার্শনিক চিন্তা বহন করে না, বা খুব কাঠামোবদ্ধ আধুনিকতা প্রদর্শন করে না, তবু এগুলোর মধ্যে একান্ত নিজস্ব এক গার্হস্থ্য জীবনবোধ আছে। তার যাপন, উপলব্ধি, ভালোবাসা, প্রশ্ন, ক্লান্তি—সব কিছু মিলিয়ে কবিতাগুলো হয়ে উঠেছে এক আন্তরিক আত্মপ্রকাশ। এই নিরাভরণ অনুভবই তাকে গার্হস্থ্য কবিতার এক আলাদা পরিচিতি দিতে পারে বলে আমি মনে করি।
Report incorrect information