'দেয়ালের ওপারে' এক অসাধারণ নারীর আত্ম-আবিষ্কারের মহাকাব্য। প্রীতিলতা রায়চৌধুরী, এক বিশাল জমিদার বাড়ির নিঃসঙ্গ উত্তরাধিকারিণী, মায়ের মৃত্যুর পর বাবার উদাসীনতায় এক সোনার খাঁচায় বন্দী পাখির জীবন কাটায়। অবারিত প্রাচুর্যের মাঝেও তার জীবন ছিল বন্ধুহীন, স্নেহবঞ্চিত একাকিত্বে ভরা। এই অবদমিত মানসিক ও জৈবিক চাহিদা তাকে ঠেলে দেয় বাড়ির সাধারণ চাকর রবিদাসের সান্নিধ্যে, যার ফলশ্রুতিতে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এই 'কলঙ্ক' প্রকাশিত হলে প্রীতির জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বাবা লক্ষ্মীনারায়ণের নিষ্ঠুরতা, রবিদাসের ওপর অকথ্য অত্যাচার এবং গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চক্রান্ত তাকে আমূল বদলে দেয়। ভীতু রাজকন্যা থেকে সে হয়ে ওঠে এক সংগ্রামী মা। নিজের ও অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাতে সে সেই অভিশপ্ত প্রাসাদ থেকে পালিয়ে আসে।
অচেনা শহরে শুরু হয় তার আসল লড়াই-পরিচয়হীন অবস্থায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সংগ্রাম। এই কঠিন পথে প্রভাবতী মাসি ও আইনজীবী অলোক সান্যালের মতো সহৃদয় মানুষ তাকে আশ্রয় দেন। অন্যদিকে, অপমান ও অবিশ্বাসের যন্ত্রণা নিয়ে রবিদাসও নিজের পথে লড়তে থাকে।
এরপর আসে এক নাটকীয় আইনি লড়াই, যেখানে প্রীতিকে তার প্রভাবশালী বাবার বিরুদ্ধে লড়তে হয় সম্মান, সন্তানের অধিকার ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। ডিএনএ রিপোর্ট জালিয়াতি, মূর্তি পাচার কাণ্ডের উন্মোচন এবং একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রীতি প্রমাণ করে যে, সত্যের শক্তি যেকোনো প্রতিপত্তি বা ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি।
উপন্যাসের শেষভাগে দেখানো হয়েছে প্রীতির চূড়ান্ত বিজয়। সে শুধু আইনি লড়াইয়ে জেতে না, জয় করে রবিদাসের বিশ্বাস ও ভালোবাসা। তারা অতীতের সমস্ত ক্ষত ভুলে এক নতুন জীবন শুরু করে। রায়চৌধুরী বাড়ির বিশাল সম্পত্তিকে সে ব্যক্তিগতভাবে ভোগ না করে তা দিয়ে অসহায় নারীদের জন্য 'নবআকাশ' নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে। নিজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে সে হয়ে ওঠে নির্যাতিতা নারীদের কণ্ঠস্বর। 'দেয়ালের ওপারে' এক নারীর বন্দিদশা থেকে মুক্তির, পরিচয়হীনতা থেকে আত্মপরিচয়ের এবং অসহায়ত্ব থেকে ক্ষমতায়নের এক অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা।
বিভাষ চন্দ্র দাস, এক কর্মময় জীবনের প্রতিচ্ছবি, যিনি সংবাদ ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকার 'সাপ্তাহিক পল্লীসমাজ' ও 'সাপ্তাহিক ব্যবসা বাণিজ্য' পত্রিকায় সাংবাদিকতার হাতেখড়ি হয় তাঁর। সে সময়ে তাঁর কবিতা ও ছোটগল্প নিয়মিত প্রকাশিত হত এবং 'পল্লীকবি সংগঠনে'র সাথে যুক্ত হয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কবিদের লেখা সংগ্রহ ও প্রকাশে অবদান রাখেন। স্কুলজীবনে দেয়াল পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতা স্থান পায়। দীর্ঘকাল খুলনার 'দৈনিক পূর্বাঞ্চল' এবং জনপ্রিয় ম্যাগাজিন 'চিত্রবাংলা'য় কাজ করার পর 'দৈনিক কালবেলা', 'দৈনিক 'স্পন্দন'সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হন। ২০১৬ সালে 'বৈশাখী টেলিভিশনে' এবং পরবর্তীতে '৭১ টেলিভিশন'র চিতলমারী প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর পেশাদারিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) থেকে টেলিভিশন জার্নালিজম ও ক্রাইম রিপোর্টিংয়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তিনি বাগেরহাট সদরে জাহানাবাদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে চাকরি ও চিতলমারীতে 'নমস দূত' এবং 'পাক্ষিক কন্ঠধ্বনি' পত্রিকার সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালে 'মুক্তবাংলা চারিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে'র ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী ও পূণর্মিলনী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা 'অরুণিমা' সম্পাদনা করেন। তাঁর নিজস্ব 'আমাদের চিতলমারী' ফেসবুক পেজ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তাঁর সংগীত সাধনাও অনবদ্য। ১৯৮৪ সালে কলেজে ভর্তি হয়েই সংগীতে মনোনিবেশ করেন। জগন্নাথ কলেজে প্রাণিবিজ্ঞানে অধ্যয়নকালে 'বাংলাদেশ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদে' যুক্ত হন এবং ১৯৯৪ সালে বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বজন-শ্রদ্ধেয় ওয়াহিদুল হক দাদু ও ড. সনজিদা খাতুনের সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। চিতলমারী উপজেলা শিল্পকলার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তৌফিক তাহেরের তথ্যচিত্র 'দশমহল বেতার'-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। বর্তমানে তিনি দৈনিক ঘোলা কাগজ', 'দৈনিক ঢাকা টাইমস', 'দৈনিক আজকের তথ্য' এবং '৭১ টিভিতে চিতলমারী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। পাঠকের ভালো লাগাই তাঁর লেখার সার্থকতা।