হেনরি ডেভেনপোর্ট। বয়স তেপ্পান্ন। সামরিক বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের একজন গেস্ট লেকচারার। সেদিন ক্লাসে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে পড়ানোর সময় ক্লাসের পেছনের দিক থেকে একটা ছেলে হাত তোলে।
'মি. ডেভেনপোর্ট, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়েছে।'
পুরো ক্লাস ঘুরে তাকায়। হেনরি জিজ্ঞাসু গলায় বলে, 'কী বিষয়?'
ছেলেটা এবার একটু অস্বস্তি নিয়ে বলে, 'সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স।'
ক্লাসে অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসে। হেনরির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বলেন, 'হ্যাঁ, এটা একটা বড়ো ধরনের যুদ্ধাপরাধ- যা নিয়ে সবচেয়ে কম কথা বলা হয়।'
ছেলেটা এবার পালটা প্রশ্ন করে, 'প্রফেসর, আর্মিতে থাকাকালীন এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে যেখানে এ ধরনের যুদ্ধাপরাধ হয়েছে এবং তার শাস্তি বিধান করেছেন আপনি?'
হেনরি থমকান। তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলেন, 'তোমার নাম কী? তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ?'
ছেলেটা উত্তর দেয়, 'আমার নাম জহির রায়হান। বাংলাদেশ থেকে এসেছি।'
হেনরি লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলেন, 'আমার ইউনিটের কেউ এমন কাজে জড়ায়নি। আর জড়ালে আমি তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতাম।'
হেনরির কথায় জহিরের সঙ্গে পুরো ক্লাস হাততালি দিয়ে ওঠে।
হেনরি হাসার চেষ্টা করেন। কেন যেন সেটা স্বতঃস্ফূর্ত হাসি হয় না। আচ্ছা, ছেলেটা কেন তাকে এমন একটা প্রশ্ন করল? আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একটা মিথ্যে কথা বলতেই হলো।
সেদিনের পর হঠাৎ করেই হেনরির মনে হয় তার জীবনের একটা দায় মেটানো হয়নি। অনেক দিন নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। সিদ্ধান্ত নেন, দায়টা এবার মেটাবেন। শুরু হয় একটা চাঞ্চল্যকর অভিযান। সেই অভিযানেরই গল্প এই উপাখ্যান। যেখানে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া নির্মম এক ইতিহাস!