তোমার রব অপেক্ষা করছেন—হে বোন! ফিরে এসো
হে বোন! একবার থামো... একটু নিজের ভেতরে তাকাও। বাইরের রঙিন আলো, উজ্জ্বল শহর, ফ্যাশনের ঝলক, সোশ্যাল মিডিয়ার হাসি—এসবের আড়ালে তোমার অন্তরটা কি সত্যিই শান্ত? রাতে ঘুমানোর সময় যখন একা থাকো, তখন কি মনে হয় না—কিছু একটা নেই? মনে হয় না—এই ঝলমলে দুনিয়ায় সব পেয়েও যেন কিছুই পাওয়া হয়নি?
জানো, তোমার সেই শূন্যতা কে বোঝে? তোমার রব—যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন, তোমার চোখে আলো দিয়েছেন, তোমার হৃদয়ে মমতা রেখেছেন।
তিনি অপেক্ষা করছেন... যেন তুমি ফিরে আসো, তাঁর পথে, তাঁর ভালোবাসায়, তাঁর শান্তির কোলে।
তুমি ক্লান্ত বোন! জীবনের নামে যে প্রতিযোগিতায় তুমি নেমেছো, সেটি আসলে এক ধোঁকা। ওরা বলে, ‘স্বাধীন হও!’ কিন্তু সেই স্বাধীনতা তোমাকে করেছে এক পণ্যের মতো—যাকে দেখা হয়, ব্যবহার করা হয়, তারপর ভুলে যাওয়া হয়। তুমি তোমার চোখের কাজল বিক্রি করেছো কর্পোরেট বিজ্ঞাপনের পর্দায়, তোমার হাসি বন্দী হয়ে গেছে মঞ্চের আলোয়, কিন্তু তোমার আত্মা? সে এখন কাঁদছে... নিঃশব্দে।
হে বোন! তোমার রব জানেন, তুমি ক্লান্ত।তিনি তোমার প্রতিটি অশ্রু দেখেন, প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস শোনেন।তুমি যত দূরেই চলে যাও না কেন, তাঁর দরজা তোমার জন্য এখনো খোলা। তিনি বলেন—
قُلْ يَا عِبَادِيَالَّذِينَأَسْرَفُواعَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوامِن رَّحْمَةِ اللَّهِ
‘বলো, হে আমার সেই বান্দাগণ যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’। — [সূরা আজ-জুমার: ৫৩]
বোন আমার, তুমি যতই দূরে গিয়েছো, যতই ভুল করেছো—তিনি তোমায় ক্ষমা করবেন, যদি তুমি কেবল একবার ফিরে আসো। তাঁর দরজায় কড়া নাড়ো, তোমার চোখের অশ্রু দিয়ে তওবা লেখো, দেখবে—রবের দয়া তোমার হৃদয়ে বৃষ্টি হয়ে নামবে।
আজ দুনিয়া তোমায় সাজাতে চায়, উলঙ্গ করে দেখাতে চায়। কিন্তু তোমার রব চান তোমায় ঢেকে রাখতে, যেন তুমি মুক্ত থাকো—মানুষের কামনা থেকে, শয়তানের দৃষ্টি থেকে।ওরা তোমায় ‘আধুনিক’ বানাতে চায়, কিন্তু তোমার রব তোমায় ‘মর্যাদাবান’ বানাতে চান। তুমি কি ভুলে গিয়েছো, তোমার পর্দা কোনো কারাগার নয়—এটা এক সোনালী মুকুট, যা তোমার সতীত্ব, তোমার মর্যাদা, তোমার স্বাধীনতার প্রতীক।
বোন আমার! তুমি সেই নারীর উত্তরসূরি, যিনি নবীর পাশে দাঁড়িয়ে ইসলামের প্রথম আলো জ্বালিয়েছিলেন। তুমি সেই নারীর উত্তরাধিকারী, যিনি তাঁর সন্তানকে জিহাদের ময়দানে পাঠিয়ে বলেছিলেন— ‘মৃত্যু যেন হয় ঈমানের গৌরবে!’ তুমি সেই জাতির সন্তান, যাদের নারী ছিল ঈমানের শিক্ষক, লজ্জাশীলতার প্রতীক, আর জান্নাতের অর্ধেকের নির্মাতা।
হে বোন! তোমার রব এখনো অপেক্ষা করছেন— যেন তুমি পর্দা ফেলে চোখ নামাও, মেকআপের স্তর খুলে নাও, আর তোমার কপালটি সিজদার মাটিতে রাখো। যখন তুমি কাঁদবে, তোমার প্রতিটি অশ্রু হবে মুক্তার মতো, আর আকাশের ফেরেশতারা তোমার নাম লিখবে ‘ক্ষমাপ্রাপ্তদের তালিকায়’।
বোন আমার! তুমি জানো না, তোমার একবার ফিরে আসা তোমার পুরো পরিবার, পুরো প্রজন্ম, এমনকি একটি জাতির জন্য বরকত হয়ে উঠতে পারে।
তোমার একবারের তওবা হয়তো তোমার ভাইকে জিহাদের সাহস দেবে,
তোমার পর্দা হয়তো একটি নতুন যুগের সূচনা করবে—যেখানে নারী হবে সত্যিকারের রাণী, লজ্জাশীলতার মুকুটে শোভিত। তোমার রব বলছেন—
إِنَّ رَبَّكِ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
‘নিশ্চয়ই তোমার রব অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আল-ইসরা: ৫৪]
তাঁর দয়ার সাগর অসীম, তাঁর ভালোবাসা অনন্ত। শুধু একবার বলো— ‘রব্বি, আমি ফিরে এসেছি’। দেখবে, তোমার জীবনের সব অন্ধকার আলোকিত হয়ে উঠবে ঈমানের নূরে।
হে বোন! তোমার রব অপেক্ষা করছেন—ফিরে এসো। আজই ফিরে এসো, তওবার অশ্রু দিয়ে ধুয়ে ফেলো অতীতের সব দাগ। তুমি হারিয়ে যাওনি, তুমি এখনো প্রিয়, তুমি এখনো আল্লাহর ভালোবাসার যোগ্য।
হে বোন! তোমার রব তোমার জন্যই আকাশ তৈরি করেছেন, চাঁদ সাজিয়েছেন, ভালোবাসার ভাষা শিখিয়েছেন। তুমি যদি তাঁর দিকে ফিরে যাও, পুরো দুনিয়া তোমার হয়ে যাবে — আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, দুনিয়ার আলোও অন্ধকার হয়ে যাবে।
তিনি তোমাকে ভয় দেখাতে চান না, বরং ডাকছেন মমতায়, তাঁর ভালোবাসায় ভরা এক কণ্ঠে বলছেন —
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ . إِنَّاللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا . إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘বলো, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের প্রতি সীমালঙ্ঘন করেছো! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।— [সূরা আজ-জুমার: ৫৩]
তোমার রব শুধু ক্ষমা করেন না — তিনি অপেক্ষা করেন।প্রতিদিন রাতে যখন অন্ধকার নামে, ফেরেশতারা ঘোষণা করে —
هَلْمِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ؟
‘কেউ কি আছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তাকে ক্ষমা করব?’—[মুসনাদে আহমাদ : ৯৫৯১]
তুমি যদি এখনই আল্লাহর পথে ফিরে যাও, তিনি শুধু তোমায় ক্ষমা করবেন না — তোমার অতীতের সব পাপকে সওয়াবে পরিণত করে দেবেন।
إِلَّامَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ
‘যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে — আল্লাহ তার মন্দ কাজগুলোকে সৎকর্মে পরিণত করে দেন’।— [সূরা আল-ফুরকান: ৭০]
হে বোন! তুমি যদি একবার বলো —
رَبِّاغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ
‘হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তওবা কবুল করো’। [মুসনাদে আহমাদ : ৪৭২৬]
তাহলে আসমানের দরজা তোমার জন্য খুলে যাবে, আর ফেরেশতারা বলবে — ‘তুমি আল্লাহর প্রিয়!’
তোমার রব অপেক্ষা করছেন—হে বোন, ফিরে এসো।আজই, এখনই, এই নিঃশব্দ রাতেই, তাঁর দরজায় কড়া নাও। কারণ তিনি বলেন —
وَاللَّهُيُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيْكُمْ
‘আল্লাহ চান তোমরা তওবা করো’। —[সূরা আন-নিসা: ২৭]
তোমার রব তোমায় ভুলে যাননি, বরং ভালোবাসার পরম আগ্রহে অপেক্ষা করছেন— যেন তুমি ফিরে এসে বলো, ‘আমি ফিরে এসেছি, হে আল্লাহ, তোমার দিকে’।