বক্তৃতার জন্যে আবশ্যক
সুন্দর বক্তৃতা দিতে কে না চায়। মানুষের মাঝে আস্থা অর্জন এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে সকলেই চায়। কিন্তু সমস্যা হলো, যে কোন বিষয়ে সফলতা অর্জন এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে সেই বিষয়ের জন্যে নির্ধারিত নিয়ম-নীতি ও দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী চলা আবশ্যক। ঠিক বক্তৃতার ক্ষেত্রেও এমন কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী রয়েছে। যার প্রতি অনেক সময় লক্ষ্য করা হয় না। আর বক্তৃতার ক্ষেত্রে এ বিষয়টির অনুপস্থিতির কারণেই অনেকে বক্তৃতার ময়দানে সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হন। অযাচিত ও অবাঞ্ছিত প্রতীয়মান হন। তাই বক্তৃতার জন্যে অতীব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ব¡পুর্ণ কিছু বিষয়াবলী পত্রস্থ করা হলো।
বক্তৃতা দেয়ার পূর্বে নির্ধারিত বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ অধ্যয়ন ও পড়াশোনা করে নেয়া।
স¤পূর্ণ বক্তৃতাকে বক্তৃতা দেয়ার পূর্বেই ধারাবাহিকভাবে তারতীব দিয়ে নেয়া।
মূল বিষয়গুলোকে পয়েন্টের মাধ্যমে নির্ধারণ করে নেয়া।
পূর্ণ প্রস্তুতির পর মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে বক্তৃতা শুরু করা।
বক্তৃতার শুরুতে (আলোচ্য বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যশীল) পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে কোন আয়াত এবং হাদীস থেকে কোন হাদীস দ্বারা আলোচনা শুরু করা।
নিজের মাঝে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল বজায় রাখা।
নিজের বক্তৃতার প্রতি শ্রোতাদের আকর্ষণ সৃষ্টি করা।
বলার মধ্যে কোন ধরনের জড়তা না রাখা।
স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরা।
নতুন নতুন এবং সুন্দর সুন্দর জুতসই শব্দ চয়নের প্রতি মনোযোগী হওয়া। কেননা একই বক্তব্য শব্দের ভিন্নতার কারণে অনেক সময় অগ্রাহ্য হয়।
বক্তৃতায় ব্যবহৃত শব্দ সম্পর্কে úূর্ব থেকেই ভালভাবে অবগত হতে হবে।
বক্তৃতার মধ্যে ব্যাপক অর্থবহ শব্দ ব্যবহার করা।
দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার না করা।
বিশুদ্ধ উচ্চারণের দিকে সবিশেষ দৃষ্টি রাখা।
প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য প্রদান করা।
উদ্ধৃতি প্রদান ব্যাতীত বক্তৃতার মধ্যে আঞ্চলিক শব্দ/ভাষা ব্যবহার না করা।
শ্রোতাদের সামনে আলোচনা শুরু করার পূর্বেই তাদের স্তর ও অবস্থান স¤পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে নেয়া।
বক্তৃতা দেয়ার সময় শ্রোতাদের চাহিদা ও রুচির প্রতি খেয়াল রাখা।
এত তাড়াতাড়ি না বলা, যার দ্বারা বক্তৃতার মূল আলোচ্য বিষয় অনুধাবন করতে শ্রোতাদের কষ্ট হয়।
বক্তব্য এতো দীর্ঘায়িত না করা যার দ্বারা শ্রোতাদের বিরক্তি এসে যায়।
বক্তৃতা সাধু বা চলিত যে কোন এক ভাষায় দেয়া। একই বক্তৃতায় সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ না করা।
বক্তৃতার নির্ধারিত আলোচ্য বিষয় ছেড়ে অন্য আলোচ্য বিষয়ে না যাওয়া।
আলোচনার বিষয়বস্তু শ্রোতাদের বোধগম্য করার জন্যে আলোচনার মাঝে মাঝে উদাহরণ পেশ করা।
মূল মূল আলোচনার শুরুতে নতুন নতুন সম্বোধন ব্যবহার করা।
কোন একটা বিষয় বলা শেষ করে পরবর্তী বিষয়ের আলোচনা এমনভাবে শুরু করা যাতে করে বুঝা যায় যে, সেটা পরবর্তী বিষয়।
প্রতি কথায় হাত না নেড়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে হাত নাড়া।
বক্তৃতার মধ্যে বিশেষ ক্ষেত্রে স্বরকে সহনীয় পর্যায়ে উঁচু করা।
বক্তৃতা করার সময় নিজেকে স্থির রাখা এবং অস্থির ও বেশামাল না হওয়া।
বক্তৃতার সময় নির্ধারিত থাকলে নির্ধারিত সময়ের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখা এবং সে অনুযায়ী বক্তৃতা শেষ করা।
কুরআন-হাদীস থেকে দলীল দেয়ার সময় আয়াত এবং হাদীসের ইবারত নির্ভুল পড়া।
আয়াত দ্বারা দলীল দেয়ার সময় সম্ভব হলে সূরা এবং আয়াত নং উল্লেখ করা।
হাদীস দ্বারা দলীল দেয়ার সময় যথাসম্ভব হাদীসের মূল ‘রাবী’ (মূল বর্ণনাকারী) এবং কিতাবের নাম উল্লেখ করা।
আয়াত-হাদীস ব্যতীত অন্য কোন উদ্ধৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে সূত্র উল্লেখ করা।
অর্থবহ আলোচনা করা, নিরর্থক আলোচনা পরিহার করা।
আলোচনার মাঝে মাঝে রসাত্মক আলাপ জুড়ে দেয়া।
তবে বক্তৃতার মূল আলোচনা যাতে তথ্যবহুল এবং প্রামাণ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা আপনার আলোচনা যতই রসাত্নক হোক না কেন যদি তা তথ্য বহুল এবং প্রামাণ্য না হয় তাহলে তার দ্বারা পাঠকদেরকে সাময়িকের জন্যে আনন্দ প্রদান করা সম্ভব হলেও কখনই তা গুরুত্ব¡úূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য হবে না।
যুক্তিযুক্ত আলোচনা করা। অযৌক্তিক কথা-বার্তা পরিহার করা।
বক্তৃতার মধ্যে সত্য তথ্য উপস্থাপন করা, অসত্য তথ্য না দেয়া।
বক্তৃতার মধ্যে কৃত্রিমতা পরিহার করা। পুরুষ হলে পুরুষের মতো আর মহিলা হলে মহিলাদের মতো কথা বলা।
ভাষার পবিত্রতা বজায় রাখা। অশ্লীল কথা-বার্তা না বলা এবং অশ্লীল শব্দ ব্যবহার না করা।
রুক্ষ, কর্কষ ও কড়া কথা না বলা।
হাসি মুখে কথা বলা। বক্তৃতা দেয়ার সময় মুখ ভার করে না রাখা।
বক্তৃতা শেষ করার পূর্বে পূর্ণ বিষয়টি গুছিয়ে নেয়া।
একটি সুন্দর পরিসমাপ্তির দ্বারা বক্তৃতা শেষ করা। এজন্যে প্রয়োজনে বক্তৃতার শেষে পবিত্র কুরআন থেকে একটি আয়াত কিংবা হাদীস শরীফ থেকে একটি হাদীস অথবা সুন্দর কোন কবিতার আংশিক উল্লেখ করা।
উপস্থাপনা সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী হওয়া।
উপস্থাপনা ও বক্তৃতার অন্যান্য বিষয় সুন্দর করার জন্যে যে কোন একজন ভালো বক্তার শরণাপন্ন হওয়া এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলা।