‘বাংলা সাহিত্যে ইলাস্ট্রেশন : সূচনা ও ক্রমধারা’ বইটি বাংলা সাহিত্যে ইলাস্ট্রেশনের দীর্ঘ ও বিবর্তনশীল যাত্রার এক বিশদ আখ্যান। ১৭৭৮ সালে হুগলিতে প্রথম বাংলা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই যাত্রার সূচনা হয়। নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের ব্যাকরণ গ্রন্থে পঞ্চানন কর্মকারের হাতে বাংলা হরফের জন্মলগ্নেই ইলাস্ট্রেশন ও মুদ্রণের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রথমদিকে ছবিগুলি ছিল শব্দের সম্প্রসারিত অংশ, যা তথ্য বা জ্ঞানকে সহজে পাঠকের মনে গেঁথে দিত। এটি ছিল সেই আদিম গুহাচিত্রের নতুন সংস্করণ, যেখানে গল্প বলার পাশাপাশি দেখানোও হচ্ছে।
১৮৫১ সালে রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদিত মাসিকপত্র ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ বাংলা ইলাস্ট্রেশনের প্রথম বড় মঞ্চ হয়ে ওঠে। এই পত্রিকা প্রমাণ করে, ইলাস্ট্রেশন কেবল সৌন্দর্যবর্ধক নয়, বরং শক্তিশালী শিক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম। ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত ‘বসন্তক’ পত্রিকা ব্যঙ্গ ও কার্টুনের মাধ্যমে ইলাস্ট্রেশনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক অসঙ্গতি তুলে ধরে নীরব প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করে।
১৮৮৬ সালে প্রকাশিত শিশুদের পত্রিকা ‘সখা’ আদ্যক্ষরের অলঙ্করণের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে নান্দনিকতার বোধ জাগিয়ে তোলে। এই সময়ে ‘দাসী’ পত্রিকার মতো প্রকাশনাগুলিতে তাজমহলের কাঠের খোদাই করা চিত্রের মতো উচ্চ কারিগরি দক্ষতার উদাহরণ দেখা যায়। বিশ শতকের শুরুতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর শিষ্যদের প্রভাবে ‘প্রবাসী’ পত্রিকার মাধ্যমে ইলাস্ট্রেশন একটি স্বতন্ত্র শিল্প মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্য শিল্পের মেলবন্ধন ঘটে।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে ‘বার্ষিক বসুমতী’, ‘মাসিক মোহাম্মদী’ এবং ‘বিচিত্রা’-এর মতো পত্রিকাতে ইলাস্ট্রেশনের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে ইলাস্ট্রেশন আধুনিক জীবনধারা, ফ্যাশন এবং সামাজিক বিষয়গুলো তুলে ধরে স্বতন্ত্র শিল্পকর্মের মর্যাদা লাভ করে।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষে বাংলা ইলাস্ট্রেশন আজ ডিজিটাল যুগে এসে পৌঁছেছে, যেখানে সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিল্পীরা আরও সৃজনশীলভাবে ভাব প্রকাশ করছেন। এই বইটি সেইসব পথিকৃৎ শিল্পীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, যারা কাঠের ব্লক ও তুলির আঁচড়ে বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন ভাষা দিয়েছিলেন এবং সাহিত্যের অদৃশ্য যাত্রাকে যুগ যুগ ধরে সজীব রেখেছেন।
জন্ম : ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭৫ কুমিল্লা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর। পেশা : সাংবাদিকতা। উল্লেখযোগ্য বই : কবিতা : হাসির দেবতা, কাকের ভাস্কর্য, লাল কাঁকড়ার নদী। ছোটগল্প : আয়নাপাথর। শিশুতোষ : গোল্ডফিশ ও একটি প্রজাপতি, শহরজুড়ে বাঘ-ভালুকের মিছিল, দুষ্টুরা দশ মিনিট আগে, ভূতের বাচ্চাটা ক্লাসে এসে কাঁদে, হ্যালো ফড়িংমিয়া। শিশুতোষ ছড়া : লাল ফড়িঙের বৌ। অনুবাদ : কাহলিল জিবরানের দ্য অনডারার,আরববিশ্বের কবিতা, নতুন ডানার উড়াল [বিশ্বের তরুণ কবিদের কবিতা]। সম্পাদনা : শূন্য দশকের গল্প।