এসো বক্তৃতা শিখি
ভাষা ও বক্তব্য। মানবজাতির ওপর মহান আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই ভাষা ও বক্তব্যের গুরুত্ব¡ ও প্রয়োজনীয়তা সীমাহীন। মানুষ তার জীবন চলতে প্রতিনিয়তই এর মুখাপেক্ষী হয়। কেননা, এর মাধ্যমেই মানুষ নিজেদের মধ্যে কথোপকথন করে, একে অপরের সাথে ভাব আদান-প্রদান করে।
যারা সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে, উত্তম ভাষায় বক্তব্য দিতে পারে, সমাজে তাদের মান-মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা অত্যাধিক। কেননা এই যোগ্যতার দ্বারা তারা যে কোন বিষয় সাজিয়ে গুছিয়ে খুব সুন্দরভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে, যে কোন বিষয়ের প্রতি লোকদেরকে আকৃষ্ট ও অভিভূত করতে পারে। নিজেদের সমস্যাবলী তুলে ধরে, সমাধান করে।
এজন্যেই দেখা যায় পৃথিবীর শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যারাই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, মান-সম্মান ও প্রতিপত্তি অর্জন করেছে, তাদের সকলেরই উত্তম বাচনভঙ্গি ও সুন্দর বক্তৃতর উপর একটি বড় দখল ছিলো। এছাড়াও আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত আদর্শ প্রচারিত হয়েছে, প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, যত বিপ্লব সংগঠিত হয়ে সফলতা অর্জন করেছে, অনুসন্ধান নিলে দেখা যাবে যে, এ সবের মূল চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করেছে সুন্দর ভাষার মনকাড়া বক্তৃতা।
ভাষা ও বক্তব্যের এত গুরুত্বের কারণে মুসলমানদেরকে এতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ার জন্যে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ করা হয়েছে সুন্দরভাবে বক্তৃত করার যোগ্যতা অর্জন করে তার মাধ্যমে ইসলামের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে অতি কম সংখ্যক লোকই এ সম্পর্কে অবগত। আর যারা অবগত তাদের মাঝেও খুব কম সংখ্যক লোকই এ ব্যাপারে সচেষ্ট।
আমাদের ‘এসো বক্তৃতা শিখি’ সিরিজের বই গুলোতে প্রদত্ত তথ্য বহুল বক্তৃতা সমূহের প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে সামগ্রিকতার দিকে লক্ষ্য করেই শিরোনাম দেয়া হয়। কেননা আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে পাঠক এবং প্রতিযোগী ভাইদের বেশি ফায়দা প্রদানের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে যদি আমরা প্রত্যেকটি (সাধারণ থেকে সাধারণ) শিরোনাম দিয়ে বক্তৃতা গুলো উপস্থাপনা করি তবে তা অবশ্যই ব্যাহত হবে। এর অর্থ এই নয় যে বক্তৃতাটি কেবলমাত্র ঐ শিরোনামের বক্তৃতার জন্যেই নির্দিষ্ট; বরং এধরনের প্রত্যেকটি বক্তৃতাই মূলত: তার বিষয় বস্তুর যে কোন শিরোনামের বক্তৃতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। বিষয়টি একবার ভালোমতো বুঝে নিলে এর থেকে অনেক উপকৃত হওয়া যাবে।
একই বক্তৃতা যদি একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন শিরোনাম দিয়ে বারবার লিখি তাহলে এটা জন সাধারণ, পাঠক ও গ্রাহকদের জন্যে তেমন উপকারী হবে না।
দ্বিতীয়ত : যেহেতু প্রতিটি বক্তৃতা একেকটি নির্ধারিত বিষয়ের উপর হয়ে থাকে তাই এজন্যে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে যেন উক্ত বিষয়ের উল্লেখযোগ্য কোন অংশ বা দিক আলোচনার বাইরে থেকে না যায়। এজন্যে অনেক সময় অনেক বক্তৃতা বেশ দীর্ঘ ও বড় হয়ে যায়। ফলে কেউ কেউ এই ভেবে চিন্তিত হন যে অল্প সময়ে এতো বড় আলোচনা তিনি কিভাবে করবেন ?
আসলে একটি বিষয়ের উপর যত আলোচনা এবং দলীল প্রমাণ উল্লেখ করা হয় তার সবই ঐবিষয়ের নির্দিষ্ট কোন শিরোনামের বক্তৃতায় বলতে হবে বিষয়টি এমন নয় বরং উচিত কাজ হলো উল্লেখিত ও প্রদত্ত বক্তৃতা থেকে যার যার প্রয়োজন পরিমাণ উপরকরণ ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় শিরোনামের উপর বক্তৃতা ও আলোচনা তৈরী করা।
তৃতীয়ত : এই বইয়ে প্রদত্ত বক্তৃতাসমূহের কোন বক্তৃতার ক্ষেত্রেই কিন্তু আমরা এমন দাবী করি না যে, উক্ত বিষয় স¤পূর্ণই আমার এই বক্তৃতায় এসে গেছে। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকে একটি বিষয়কে যথাসম্ভব পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার। তবে মানুষ মাত্রই সীমাবদ্ধ আকল ও ইলমের অধিকারী হওয়ায় কোন একটি বিশেষ অংশ বা কিছু জরুরী তথ্য-প্রমাণ কোন বক্তৃতায় নাও আসতে পারে যা, অন্য কোন পাঠক বা প্রতিযোগীর বক্তৃতায় আছে। এটা হতেই পারে আর আমাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যও হলো বিষয়ভিক্তিক বক্তৃতার জন্যে প্রয়োজনীয় একটি কাঠামো তৈরী করে দেয়া যাতে এরপর প্রত্যেকে নিজ নিজ আঙ্গিকে তার সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হন।
চতুর্থত : “বক্তৃতার জন্যে আবশ্যক” শিরোনামে প্রদত্ত টিপস-গুলোর ক্ষেত্রেও উপরোক্ত বিষয়টি প্রযোজ্য যে, এগুলোই স¤পূর্ণ নয় বরং প্রদত্ত টিপস-গুলোর অনেক গুলোই এমন যাতে অনেক বিস্তারিত আলোচনা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে এবং এছাড়া অন্য টিপসও থাকতে পারে।
সম্মানিত মহোদয়!
বিজ্ঞ পাঠক মহলে আমাদের এই ‘এসো বক্তৃতা শিখি’ সিরিজের বই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হওয়ায় মহৎ হৃদয়বানদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবেই কৃতজ্ঞ। (তবে একটি বিষয় আমাদের কাছে খুবই আশ্চার্যজনক যে) এ পর্যন্ত আমরা এই বই স¤পর্কে অনেকের থেকেই খুব আশা ব্যাঞ্জক মন্তব্য এবং প্রশংসাসূচক বক্তব্য পেয়েছি। যার তুলনায় সমালোচনা খুবই কম।
এটা আমাদের জন্যে একদিকে যেমন মহা আনন্দের উপলক্ষ, তেমনি অপরদিকে দুশ্চিন্তারও কারণ। কেননা আমরা সচেতন পাঠক সমাজের কাছে শুধু অব্যাহত প্রশংসাই আশা করি না, বরং এর সাথে সাথে গঠনমূলক সামালোচনাও দাবী করি। কেননা আমাদের উন্নতি ও অগ্রগতি যতটুকু আছে আমরা চাই তা আরো বৃদ্ধি করতে এবং সম্মুখ পানে এগিয়ে যেতে। আর এজন্যে বুদ্ধিমান, মহৎ হৃদয়ের অধিকারী বিজ্ঞ পাঠকদের হৃদয় নিসৃত আত্মশুদ্ধির উপযোগী গঠনমূলক সমালোচনা এবং নতুন নতুন পরামর্শ আমাদের জন্যে খুবই প্রয়োজন। যাতে আমরা আমাদের ভুল-ভ্রান্তিগুলো শুধরে নিতে পারি এবং প্রকাশনার জগতে রুচিশীল ইসলামী সাহিত্য ও তথ্যপূর্ণ জ্ঞানের ভাণ্ডার উন্মোচিত করতে সক্ষম হই।
তারপরও যে সকল মহৎপ্রাণ সকল বাঁধা এড়িয়ে, শত প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলামের চাহিদা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক, দ্বীনের জন্যে সেচ্ছায় ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকার করতে প্রস্তুত এবং বিভিন্ন মাদ্রাসাসমূহে সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানগুলোতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে যে সকল ছাত্র ভাই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও প্রতিকুলতার শিকার হন, তাদের সকলের সহযোগিতা ও সুবিধার জন্যেই এই বইয়ের প্রকাশ।
এখন নিম্নে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত বক্তৃতার জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক-নির্দেশনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আশা করি এগুলো পূর্ণরূপে অনুসরণ করলে বক্তৃতার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করা সহজ হবে।
মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান
খান প্রকাশনী, বাংলাবাজার।
০৬/০৫/০৭ ইং