হযরত আবুবকর রা. ছিলেন প্রিয় নবী ﷺ এর সবচে নিকটজন সাহাবী। ইসলামের প্রথম খলিফা। আল কুরআনের মোহাফেজ। ভন্ড নবীদের উৎখাতকারী। ইসলামের প্রচার প্রসার ও রাষ্ট্রীয় ভিত্তি প্রদানের পুরোধা ও মহান মুজাহিদ। বিনয়ী, সৎ, দানশীল ও সত্যবাদী। ইসলামের ইতিহাসে নবী ﷺ এর পর তার কৃতিত্ব অন্যতম। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের ব্যাপকতা নিরুপণ করা অসম্ভব।
হযরত আবুবকর রা. আমাদের প্রেরণার উৎস। নববী জীবন গড়ার আনুপম নিদর্শন। সুতারং তার জীবন ও কর্মের সুশোভন পুষ্পঘ্রাণে আমাদের জীবন আলোড়িত হবেই। আর তাই, হযরত আবুবকরের জীবনী গভীরভাবে পাঠ করা আবশ্যক।
কিংবদন্তি মুসলিম কবি ও গদ্যকার গোলাম মোস্তফা রহ. হযরত আবুবকর রা. জীবন ও কর্মের উপর এই গ্রন্থটি রচনা করেন৷ যা তার রচিত বিখ্যাত সীরাতগ্রন্থ “বিশ্বনবী” এর ধারায় রচিত। যুগ যুগ ধরে বাঙালী পাঠকের ঘরে ঘরে বইটি পঠিত হয়ে আসছে। বইটির ধারাবর্ণনা কাব্যিকঢঙের হৃদয়গ্রাহী ভাষায়, তথ্যবহুল।
তালবিয়া প্রকাশন তার “চিরায়ত সীরাত” প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় গোলাম মোস্তফা রহ. রচিত “হযরত আবুবকর” গ্রন্থটি পরিমার্জিত পুনঃপ্রকাশ করছে। আমরা আশা করছি সমকালীন পাঠক মননে বইটির পুনঃপ্রকাশ প্রশংসিত হবে।
লেখক বইটি সম্পর্কে বলেন...
“হযরত আবুবকরের জীবন ও চরিত্র যে কত মহান ও সুন্দর পূর্বে তাহা বুঝি নাই। এখন দৃঢ় কণ্ঠে বলিতে পারি, হযরত আবুবকরের জীবনী না পড়িলে রসূলুল্লাহর জীবনী পাঠ সম্পূর্ণ হয় না। ধ্বনির সহিত প্রতিধ্বনি থাকিলে যেমন ধ্বনির পূর্ণতা অনুভব করি, আদর্শের সহিত সার্থক অনুকৃতি দেখিলে যেমন আদর্শের পূর্ণতাই উপলব্ধি করি, সেইরূপ রসূল্লাহ্র পার্শ্বে তাঁহারই
গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তাঁরা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত। তাঁর তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এবং সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তাঁর নাতি।
শিক্ষা জীবন গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজী স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রীও লাভ করেন।
পেশাগত জীবন ১৯২০ সালে জানুয়ারী মাসে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোলাম মোস্তফার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। ১৯২৪ সালে ব্যারাকপুর হাই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে বদলী হন। দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতা করার পর তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় বদলী হন। সেখান থেকে ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে বদলী হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন এবং কয়েক বছর পর উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা লাভ করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে তিনি বাঁকুড়া জিলা স্কুলে বদলী হন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের সাধক কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।