সমাজবিজ্ঞান একটি সর্বাত্মক বিজ্ঞান হওয়ায় এর তাত্ত্বিক পরিধিও অত্যন্ত ব্যাপক। অগাস্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানের গোড়াপত্তন করলেও মূলত সমাজ বিষয়ক আলাপ- আলোচনার শুরু আরও পূর্ব থেকেই। আদিম সমাজ থেকেই মানুষ তাদের নিজেদের যুঁথবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পেরেছে। তাই সমাজ প্রত্যয়টি সম্পর্কে সম্মক ধারণা ছাড়াই মানুষ সমাজ গঠন করে নিয়েছে। নিজেদের সমাজকে প্রতিষ্ঠা করতে সামাজিক চুক্তি করেছে। এসব কিছুই মানুষ করেছে তাত্ত্বিক চিন্তা ছাড়া স্বপ্রণোদিতভাবে। আমরা জানি, সমাজে টিকে থাকার জন্য তত্ত্ব আবশ্যক নয় কিন্তু বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের অস্তিত্ব নির্ভর করে তত্ত্বের উপরে। সমাজ বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সমাজ সম্পর্কে মানুষের আবেগ-অনুভূতি প্রাচ্য পাশ্চাত্য দার্শনিকগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে এ সম্পর্কে সুগভীর চিন্তা-ভাবনা করতে। খ্রিস্টপূর্ব সময়কালে সক্রেটিস, প্যারেটো, এরিস্টটলও তাঁদের দার্শনিক আলোচনায় সমাজকে নিয়ে এসেছেন। সমাজ সম্পর্কে তাঁদের নিবিড় চিন্তা-ভাবনা, ধারণা পরবর্তীকালের দার্শনিকগণকে সমাজ সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই প্রাচ্যে ইবনে খালদুনকে যেমন দেখি সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নতুন একটি শাস্ত্রকেই (সমাজবিজ্ঞান) সৃষ্টি করে ফেলেছেন। তেমনি পাশ্চাত্যে অগাস্ট কোঁৎকে দেখি সমাজবিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় কিছু তাত্ত্বিক প্রেক্ষিত প্রদানের বিনিময়ে সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পৃথিবী ব্যাপী পরিচিত হতে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো এঁরা কেউই প্রথম দিকে সমাজবিজ্ঞানী নামে পরিচিত ছিলেন না। পরবর্তীকালের চিন্তাবিদগণ সমাজবিজ্ঞানী পরিচয়েই তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছেন এবং বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন।
সর্বাত্মক বিজ্ঞান হওয়ায় সমাজবিজ্ঞানীগণের মধ্যে তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও আমরা বিভিন্নতা লক্ষ্য করে থাকি। এর অর্থ এই নয় যে, সমাজবিজ্ঞান তাত্ত্বিক প্রেক্ষিতে একটি বিতর্কিত বিজ্ঞান। বরং এটি সর্বজন স্বীকৃত যে সমাজবিজ্ঞান বহুধা দৃষ্টিভঙ্গিতে সমৃদ্ধ হয়েই নিজের ব্যাপ্যতার প্রসার ঘটিয়েছে ততদূর পর্যন্ত ঠিক যতদূর সমাজের ব্যাপ্তি। সমাজে যেমন আমাদের ভিন্ন ভিন্ন মতধারা দেখা যায়, আদর্শগত বিশ্বাস বা ধারণা দেখা যায় এর প্রতিফলন সমাজবিজ্ঞান ধারণ করবে এটাইতো স্বাভাবিক। এসব তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করেইতো সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তত্ত্বের ভিন্নতা সমাজবিজ্ঞানকে বিতর্কিত নয় বরং সম্মানিত এবং সমৃদ্ধ করেছে, বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের শাখা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আমরা যেকোন আদর্শিক বা তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিশ্বাসী হতে পারি, কিন্তু অন্য আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গিকে অস্বীকার করতে পারি না। ধ্রুপদী, আধুনিক, আধুনিকতাত্তোর সব ধরনের তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলে প্রকৃত অর্থে সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সর্বাত্মক জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বিভিন্ন কলেজসমূহে
মুহম্মদ নূরুল হুদা ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ সেকান্দর ও মাতা আঞ্জুমান আরা বেগম। মূলত কবি তিনি। তবে কথাসাহিত্য, মননশীল প্রবন্ধ ও অনুবাদসহ সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি বিচরণশীল। অতিপ্রজ ও সব্যসাচী এই লেখকের স্বরচিত, অনূদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। মুহম্মদ নূরুল হুদার প্রাপ্ত পুরস্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কক্সবাজার পদক (১৯৮৯), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৪), আহসান হাবীব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), যুক্তরাষ্ট্রের আই.এস.সি ঘোষিত পয়েট অব ইন্টারন্যাশনাল মেরিট ও পয়েট অব দ্য ইয়ার (১৯৯৫), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত নজরুল জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), জীবনানন্দ জন্মশতবার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯), সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), একুশ-উনিশে ভাষা গৌরব শীর্ষক ত্রিপুরা রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননা (২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১২) ইত্যাদি। ১৯৯৭ সালে তিনি তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুলেমান ডেমিরিল কর্তৃক বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু হয়েছিল ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। তারপর বাংলা একাডেমিতে চাকরি বদল। এখানেই বিকশিত তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সময়। তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের লেখকদের সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি। তিনি আন্তর্জাতিক লেখক দিবসের প্রবক্তা। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি সাহিত্য-সংগঠক হিসেবেও তিনি সর্বমহলে সমাদৃত।