মারা গেলেন । একেবারে দুম করে । বন্ধুগন, বলে মাইকের দিকে হাত বাড়ালেন । এই ধরনের বক্তৃতা দেবার আগে যেমন বাড়ান । বেশ একটু জোর পাওয়া যায় । মনে হয় জনগণের কণ্ঠ চেপে ধরেছি। বকের গলার মত । কথার ছুরি চলবে ফ্যাঁস ফোঁস, এপাশে ওপাশে। শেষে জনগণ একেবারে লটকে পড়বে ।
পরনে ফর্সা ধবধবে ধূতি, পাঞ্জাবি । চোখে মুখে জনহিতব্রতের মেকআপ । বন্ধুগণ, বলে মাইকের টুটি চেপে ধরলেন । তারপর আর কোনো কথা শোনা গেল না । ভস্ ভস্ করে অদ্ভুত এক ধরনের শব্দ হল । তিনি ধীরে ধীরে হাঁটু ভেঙে ডায়াসে পড়ে গেলেন । চারপাশ থেকে সকলে ছুটে এলেন। বড় কর্মী, ছোট কর্মী । পতাকাবাহীর দল । ফুলদানি উলটে গেল । দু একটা চেয়ার মঞ্চ থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেল । বিশাল জনসমুদ্র, কি হোলো, কি হোলো, বলে ঢেউয়ের মত তরঙ্গায়িত হয়ে উঠল । শোক মিশ্রিত ভারি গলায় জনৈক মধ্যমাপের নেতা বললেন, আমরা দুঃখিত । ইনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আপনারা ধীরে ধীরে সভাস্থল ত্যাগ করুন ।
অসুস্থ নয় । তিনি মারা গেছেন । ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক । কী অসহায় চিত্ৰ ? যিনি এতকাল জনগণকে বয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তিনি জনগণের হাতে চেপে ধীরে ধীরে উঁচু মঞ্চ থেকে সমতলে নেমে এলেন । সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি ছুটল ক্ষমতার লাল বাড়ির দিকে নয়, সোজা হাসপাতাল । দেহ আছে, দেহে প্রাণ নেই । ক্ষমতার তকমা ফেলে তিনি চলে গেলেন । যেখান থেকে এসেছিলেন, সেইখানে। ইজটিজম্ সব পড়ে রইল আবর্জনার মত । এসেছিলেন রিক্ত, চলে গেলেন রিক্ত । যেন নিঃশব্দে হালকা একটি বাতাস বয়ে গেল । মানুষের শেষ নিঃশ্বাস ।
II এক II
যমরাজ বসে আছেন সিংহাসনে। এত বছর বয়েস হল, চেহারাটি কিন্তু এতটুকু টসকায় নি। মসৃণ দেহত্বক । উজ্জ্বল দুটি চোখ। যখন হাসেন শুভ্র এক সার দাঁত ঝিলিক মেরে ওঠে, বিদ্যুৎবালার মত । মৃত্যুর খবরে তিনি হাসেন, জন্মের খবরে দীর্ঘশ্বাস মোচন করে বলেন, ‘আবার কাজ বাড়ল হে চিত্রগুপ্ত। ফাইলটা দেখ । ক' দণ্ড পরে তুলে আনতে হবে! কিসে মরবে!'
চিত্রগুপ্ত নবজাতকের ভাগ্যলিপি দেখে, সময় বলেন । মৃত্যুর ধরন-ধারণ জানিয়ে দেন । যমরাজ বলেন, ‘একেই আমার কর্মচারীর সংখ্যা কম, কি ভাবে কি হবে বুঝি না । নরকেও তিল ধারণের স্থান নেই । ঢাকনা খুলতেও ভয় করে ।