ফিতনা' শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, অন্তর্ঘাত, চক্রান্ত, বিপর্যয়, পরীক্ষা প্রভৃতি। 'আরবি ভাষায় ফিতনার তনার সামগ্রিক অর্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আগুনে পুড়িয়ে সোনার আসল-নকল ও মান যাচাই প্রক্রিয়া বোঝাতে ফিতনা শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতেও এরূপ অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। 'সেদিন তাদের আগুনে পোড়ানো হবে।"
এ পরীক্ষা আমাদের প্রিয় কোনো কিছু যেমন- অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা, পুরুষের জন্য নারী, নারীর জন্য পুরুষ দিয়ে হতে পারে। আবার হতে পারে আমাদের অপছন্দনীয় কিছু দিয়ে যেমন অকস্মাৎ বিপদ, গৃহযুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা, অত্যাচারী শাসক ইত্যাদির মাধ্যমে। ইবনুল আরাবী ফিতনার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ফিতনা মানে পরীক্ষা, ফিতনা মানে দুর্যোগ, ফিতনা মানে সম্পদ, ফিতনা মানে সন্তান, ফিতনা মানে কুফর, ফিতনা মানে মতপার্থক্য, ফিতনা মানে
ফিতনার ভয়াবহতা এবং মুসলমানদের করণীয়
নবী করীম-এর ওফাতের সময় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। নবীজিও-এর জীবদ্দশায় দেয়া ভবিষ্যৎবাণীগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিয়ামত খুব বেশি দূরে নয়, অতি সন্নিকটে। নবীজি এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ক্বিয়ামতের আগে পৃথিবীতে অহরহ ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। বিশেষ করে আলিমদের কাছ থেকে ফিতনা ছড়ানোর কথা হাদিস শরীফে রয়েছে। আর বর্তমানে আমরা সে সময়ে এসে পৌছে গেছি। এখন আমরা চতুর্দিকে ফিতনা দেখতে পাচ্ছি। ফিতনা শব্দটি আমাদের কাছে বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত হলেও এর সঠিক অর্থ আমরা অনেকেই জানি না। ফিতনা থেকে
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।