আলহামদুলিল্লাহ্। মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে "ইসলামী ব্যাংকিং-এ ওয়াক্ত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর ভূমিকা: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ” (Waqf in Islamic Banking and its Role in Socio-economic Development: Bangladesh Perspective) শিরোনামে পিএইচ.ডি. গবেষণাকর্মটির অংশ বিশেষ "ইসলামী ব্যাংকিং-এ ক্যাশ ওয়াক্ত” গ্রন্থাকারে প্রকাশের কাজ সম্পন্ন হলো। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা। ইসলামে মানবজীবনের সকল দিক ও বিভাগের যাবতীয় বিধিমালা বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা আন্তর্জাতিক জীবনের এমন কোন বিষয় নেই যা ইসলামে বর্ণনা করা হয়নি। ওয়াক্ত ইসলামী শরী'আহর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ওয়াক্ত হল, কোন সম্পদ আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে দেয়া, যার মুনাফা বা তা থেকে উৎপাদিত পণ্য আল্লাহর বান্দারা ভোগ করবে। ইসলামী অর্থ-সম্পদ সংশ্লিষ্ট এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার অন্যতম একটি কার্যক্রম। আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থার নীতিমালায় ইসলামী শরী'আহর গণ্ডীতে পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থায় ওয়াক্ফ কার্যক্রম আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ওয়াক্ফ কার্যক্রম একটি আশাব্যঞ্জক বিষয়। বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড সর্বপ্রথম ক্যাশ ওয়াক্ত সঞ্চয় প্রকল্প চালু করে। এরপর ২০০৪ সালের ১লা জুলাই দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক 'ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড' ক্যাশ ওয়াক্ফ সঞ্চয় হিসাব চালু করে। এরপর ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং প্রচলিত ধারার এবি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়া 'ক্যাশ ওয়াক্ফ্ফ' হিসাব চালু করে। 'ক্যাশ ওয়াক্ত' বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংযোজিত শরী'আহম্মত 'ক্যাশ ওয়াক্ফ্ফ' কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই ইসলামী ব্যাংকসমূহের 'ক্যাশ ওয়াক্ফ্ফ'
কার্যক্রমটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে অবদান রেখে চলেছে তা যথাযথ মূল্যায়িত হলে, আরো বৃহত্তর পরিসরে এ কার্যক্রম বিস্তৃত হবে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাঙ্খিত অবদান রাখতে পারবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামী শরী'আহ্ অনুমোদিত 'ক্যাশ ওয়াক্ফ' সম্পর্কে উচ্চতর গবেষণা হওয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যেহেতু ওয়াক্ত প্রসঙ্গে আল-কুরআনে অসংখ্য আয়াত নাযিল হয়েছে এবং আয়াতসমূহের প্রাসঙ্গিক আলোচনায় অসংখ্য হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি ইসলামী ব্যাংকিং-এ ওয়াক্ত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এর ভূমিকা: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ শিরোনামে বা প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর গবেষণা সম্পাদিত হয়নি।
উপর্যুক্ত প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আলোকে পিএইচ.ডি. গবেষণার স্বীকৃত পদ্ধতির আলোকে গবেষণাকর্মটি প্রণীত হয়েছে। আমার এই গবেষণার সুপারভাইজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউসুফ ইবন হোছাইন স্যার-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যার আন্তরিক সহযোগীতা আমার দীর্ঘপথ চলাকে সহজ করেছিলো।
এ গবেষণাকর্মের প্রারম্ভিকায় একটি ভূমিকা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে-ব্যাংকব্যবস্থার পরিচয় ও ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে ব্যাংক এর পরিচয়; দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ব্যাংকের উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তন ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে ব্যাংকিং কার্যক্রমের ধারা তুলে ধরা হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে- ইসলামী ব্যাংকিং-এর ধারণা সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ইসলামের অর্থনৈতিক ধারণা ও ব্যাংকিং ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায়ে- বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে বাংলাদেশের ব্যাংকব্যবস্থা, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং এর সূচনা ও ক্রমবিকাশ ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং এর হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ে- ইসলামে ওয়াক্ত সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে ওয়াকফ্ফ-এর পরিচয় ও প্রকারভেদ, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ইসলামে ওয়াক্কের ক্রমবিকাশ ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে ওয়াফ্ফের শারঈ' বিধান, চতুর্থ পরিচ্ছেদে বাংলাদেশে ওয়াক্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে- আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানে উন্নয়ন, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সূচক; তৃতীয় পরিচ্ছেদে ইসলামের দৃষ্টিতে উন্নয়ন ও চতুর্থ পরিচ্ছেদে ইসলামী ব্যাংকিং ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে- আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংকিং এ প্রচলিত ওয়াফ্ফের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে বিশ্বজুড়ে ইসলামী ব্যাংকিং এ অনুশীলিত ওয়াফ্ফের ধরন ও পরিমাণ, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ওয়াক্ত ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ক্যাশ ওয়াক্কের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এ গবেষণাকর্মটি বাংলায় রচিত হয়েছে, তবে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় রচিত গ্রন্থাবলির উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়েছে। এ গবেষণাকর্ম রচনা ও প্রণয়নে বাংলা ভাষার চলিত প্রাঞ্জল রীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। সাংবিধানিক ও কোটেশনমূলক কিছু জায়গায় সাধুরূপ ব্যবহার করা হয়েছে। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির 'প্রমিত বাংলা বানান রীতি'কে অনুসরণ করা হয়েছে। তবে ইসলামি ও আরবি পরিভাষার অনেক বানানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রচলিত ও বোধগম্য ভাষা রীতি ব্যবহারের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। গবেষণার শেষাংশে একটি বিশ্লেষণধর্মী উপসংহার এবং গবেষণার ফলাফল ও ফলাফলের আলোকে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে। শেষাংশে গবেষণাকর্মে ব্যবহৃত গ্রন্থসমূহের একটি গ্রন্থপঞ্জি প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টার- এর নির্বাহী পরিচালক মুহতারাম শহীদুল ইসলাম ভাই এর প্রতি সবিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি এটিকে গ্রন্থাকারে প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। মহান আল্লাহ এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
পরিশেষে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন এ গবেষণাকর্মটিকে দীনের খিদমতে কবুল করেন এবং আখিরাতে এটিকে নাজাতের উসিলা হিসেবে গ্রহণ করেন। আমিন।