জনপ্রিয় আলিফ লায়লা বা আরব্য রজনীর গল্প বহুকাল থেকেই আমাদের দেশে পরিচিত। নানাভাবে নানা মাধ্যমে এই গল্পগুলো পরিবেশিত হয়ে চলেছে। শত শত বছর অতিক্রম করেও এসব গল্পের আকর্ষণ এতটুকু ম্লান হয়নি। আজও পর্যন্ত সারা বিশ্বের মানুষ আরব্য রজনীর গল্পের রস সমানভাবে উপভোগ করছে।
নামে আরবীয় কাহিনি হলেও আসলে কিন্তু গল্পগুলোর জন্ম প্রাচীন মিশর থেকে। লোককাহিনি রূপে মানুষের মুখে মুখে ফিরত। মৌখিক লোককথাগুলোর প্রথম লিখিত রূপ দেওয়া হয় প্রাচীন পারসিক ভাষায়। তার নাম ছিল ‘হাজার আফসানা’। পরবর্তীকালে এই কাহিনিগুলোকে আরবদেশের পটভূমিকায়, কখনো বাগদাদের খলিফা হারুন-অর-রসিদকে (৭৬৪-৮০৯ খ্রি:) নায়ক করে পুনর্বিন্যাস করা হয়। অধিকাংশ কাহিনিই ফতেমীয় (৯৬৮-১১৭১ খ্রি:) ও মামেলুক (১২৫০-১৩৮২ খ্রি:) রাজবংশের রাজত্বকালে সংগৃহীত হয়েছিল। ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এই গ্রন্থে প্রাচীন মিশরীয় ও দূরপ্রাচ্য দেশীয় গল্পগুলোকে ঢেলে সাজানো হয়। তার নাম দেওয়া হয় ‘আলফ লায়লা’।
দশম শতকে আবু আবদুল্লা ইবন্ আবদুস অলজসায়রী প্রাচীন আরবি, পারসিক ও গ্রীক উপকথাগুলো সংগ্রহ করে হাজার কাহিনির এক সুবৃহৎ সংকলন প্রকাশ ও প্রচারের সঙ্কল্প করেন। ৯৪২ খ্রি: তাঁর মৃত্যুর পর দেখা গেল তিনি মাত্র ৪৮০টি গল্প সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এই গল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী ‘আলফ খুরাফা’ ও ‘আলফ লায়লা’ থেকে। এই সংকলনেরই সংকলিত পূর্ণাঙ্গ রূপ বর্তমানে প্রচলিত ‘অ্যারেবিয়ান নাইটস’ বা ‘আরব্য রজনী’।
ইউরোপীয়ান ভাষায় আরব্য রজনীর প্রথম অনুবাদ করেন ফরাসী লেখক আন্তোনিও গ্যাল্লান্দ (১৬৪৬-১৭১৫ খ্রি:) জার্মান ভাষায় ‘সহস্র ও এক রজনী’ নামে আর একটি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮২১-২৮ খ্রি:। ইংরেজি ভাষাতেও একাধিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৮৮৫-৮৮ খ্রি: স্যার রিচার্ড বার্টন (১৮২১-৯০ খ্রি:) ইংরেজি ভাষায় আরব্য রজনীর ষোল খণ্ডে যে অনুবাদ প্রকাশ করেন সেটিকেই সবচেয়ে বিস্তারিত ও বিশ্বস্ত বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলা ভাষায় এই জনপ্রিয় গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হতে থাকে উনবিংশ শতাব্দী থেকে।
আরব্য রজনীর সব কাহিনিই ছোটদের উপযোগী নয়। সে কারণে নির্বাচিত কিছু জনপ্রিয় গল্প ছোটদের জন্য পরিবেশিত হল। নতুন যুগের নতুন পাঠকরা কাহিনিগুলো পাঠ করে যুগপৎ আনন্দ ও শিক্ষা লাভ করবে।