সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় জীবনের গতিপথ। একই গণ্ডিতে বেড়ে ওঠা মানুষগুলোর প্রত্যেকের সামনে খুলে যায় ভিন্ন ভিন্ন একেকটি দরজা। বেছে নিতে হয় বিচিত্র সব গন্তব্য। ধীরে ধীরে প্রিয় মুখগুলো হারিয়ে যেতে থাকে আটপৌরে জীবনের নানা টানাপোড়নের মাঝে। কুড়িয়ে পাওয়া কিছু বাদামি সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ হঠাৎ কেবল মনে পড়ে যায় যৌবনের হারানো বন্ধুদের কথা।
হ্যাঁ, বন্ধুদের আলাদা জায়গা থাকে। কিন্তু কয়জন পারে সেই জায়গাটিকে সারাটি জীবনভর বুকের মাঝে ধারণ করতে? কেউ কেউ পারে। অন্তত পারতে চায়। শেষমেশ হয়তো পারা হয়ে ওঠেনা কিন্তু চেষ্টাটা তারা ষোলো আনাই করে।
তেমনই কিছু মানুষকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এ উপন্যাস। যারা বন্ধুর জন্য বরাদ্দ জায়গাটিকে আজীবন সুরক্ষিত রাখতে চায়। একজন আরেকজনের হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাটাতে চায় জীবনের প্রতিটা বসন্ত। যাদের প্রত্যেকের শুধু একটিমাত্র গন্তব্য। সে গন্তব্যের নাম বৃষ্টিমহল!
বৃষ্টিমহল সমগ্র ২
ছয়টি ছেলেমেয়ের বন্ধুত্বকে কেন্দ্র করে বৃষ্টিমহলের বিশাল প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হয়েছে পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক বৈষম্য, দেশপ্রেম, মূল্যবোধের তারতম্য, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব এবং গভীর জীবনবোধ! বন্ধুদের আলাদা জায়গা থাকে। যে জায়গাটা উচ্ছ্বাসের, আনন্দের, নির্ভরতার এবং স্বস্তির। ওরা ছয়জন এই বিশেষ স্থানের নাম দিয়েছে বৃষ্টিমহল। শুধু নাম দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। একটা কাচ দেয়ালের মহল বানানোর স্বপ্নও দেখে ফেলেছে। যে মহলের চারিধার থাকবে আয়না দিয়ে ঘেরা। মহলের ওপরের কাচের আচ্ছাদনে আকাশ সর্বক্ষণ তার মুখখানি দেখতে পাবে। তারপর বর্ষাকালে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে, মহলের গায়ে গায়ে বৃষ্টি তার ইচ্ছেমতন আলপনা আঁকবে আর মহলের বাসিন্দাদের মনে হবে ছাদটা আসলে কাচের নয়, আয়নার নয়, ছাদটা আসলে বৃষ্টির! কী ভীষণ ছেলেমানুষ ছিল ওরা! এসব ছেলেমানুষি জীবনের একটা পর্যায়ে কেটে যায়। তবে কিছু কিছু বন্ধুপাগল মানুষের ছেলেমানুষি মনোভাব কেটে গেলেও বন্ধুমানুষি মনোভাবটা বুঝি কখনওই আর কাটে না। তাই তো বাস্তবতার জাঁতাকলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হবার পরেও এই ধূলোবালি মাখা জীর্ণ, ধূসর পৃথিবীর ছাদে ওরা ছয়জন আজো বুকের ভেতর কাচ দেয়ালের এক বৃষ্টিমহল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু চলার পথে যদি কখনো কোন এক প্রলয়ংকরী কালঝড় তীব্র বেগে ছুটে এসে গুঁড়িয়ে দিতে চায় বৃষ্টিমহলকে, ছিনিয়ে নিতে চায় ওদের বন্ধুত্ব, তখন কী করবে বৃষ্টিমহলের বন্ধুরা? সেই ঝড়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে কি? সমস্ত বাধা বিপত্তি পায়ে ঠেলে শক্ত করে ধরতে পারবে কি একে অন্যের হাত? জীবন যুদ্ধে শেষ অবধি কে জিতবে? পরিবার? স্বার্থ? প্রেম? বিবেক? নাকি বন্ধুত্ব?
ওয়াসিকা নুযহাতের লেখালেখির হাতে খড়ি খুব ছোট বেলায়। স্কুল ম্যাগাজিনের গন্ডি পেরিয়ে প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর 'ছুটির দিনে' পত্রিকায়। ২০১৫ সালে 'ভোরের কাগজ' ঈদ সংখ্যায় প্রকাশ পায় উপন্যাস 'মাঝে মাঝে তব'। এরপর ২০১৬'র অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রথম বারের মতো মলাটবন্দি হয়ে একক বই হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে উপন্যাস 'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি'। নিয়মিত লেখিকা ছিলেন 'কিশোর তারকালোক' সহ সমকালীন বেশ কিছু কিশোর পত্রিকায়। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সাথে। আইন বিষয়ে লেখাপড়া এবং কর্মজীবনের সূচনা হলেও সাহিত্যের মাঝেই তিনি খুঁজে পান আত্মিক মুক্তি এবং বেঁচে থাকার তীব্র স্বাদ। যদিও নিজেকে তিনি সাহিত্যিক দাবী করতে নারাজ, নিজের সম্পর্কে প্রায়শই বলে থাকেন, 'আমি সাহিত্যিক নই, খুব সাধারণ একজন গল্পকার।'