কবিতা কখনো কেবল শব্দের খেলা নয়, বরং মানুষের অন্তর্জগতের এক অনুপম প্রকাশ। কবিতায় ধরা পড়ে জীবনের দোলাচল, হৃদয়ের গভীর টানাপোড়েন, প্রেমের মাধুর্য কিংবা হারানোর হাহাকার। এই সংকলনের প্রতিটি কবিতা যেন সেইসব অনুভূতির দরজা খুলে দেয়, যেখানে পাঠক প্রবেশ করলে খুঁজে পাবেন একদিকে নিঃসঙ্গতার দীর্ঘশ্বাস, আবার অন্যদিকে ভালোবাসার অনিঃশেষ মায়া।
প্রথম দৃষ্টিতে মনে হতে পারে- এখানে বিচ্ছিন্ন কিছু কবিতা রয়েছে। কিন্তু গভীরভাবে পড়লে দেখা যায়, এরা আসলে একক কণ্ঠস্বরের বহুমাত্রিক প্রতিধ্বনি। কখনো কবি আত্মগর্বে উচ্চারণ করেছেন “অহংকারের শিখা”, আবার অন্য কোথাও প্রেমিক হৃদয়ের আকুলতায় বলেছেন “এই জন্মেই ভালোবাসো”। কোথাও সময়ের প্রতি প্রত্যয়ী ঘোষণা- “আমি এখনো মানুষ আছি”, আবার কোথাও ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ- “রাষ্ট্রদ্রোহী প্রেম”। আরেকদিকে আছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার স্নিগ্ধ বেদনা- “তবুও অপেক্ষা”, কিংবা ভেতরে জমে থাকা নিঃশব্দ অনুশোচনা- “আক্ষেপ আছে”।
এমন বহুমাত্রিক কবিতাগুলো আসলে একক নদীর বিভিন্ন স্রোতধারা। প্রেম এখানে শুধু সম্পর্কের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, সমাজের প্রতি মমতা আর ইতিহাসের প্রতি অঙ্গীকার হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে। আবার শহরের ক্লান্ত নিঃশ্বাস কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের শেকলে বন্দি মানুষের আর্তনাদও জায়গা করে নিয়েছে একই ভুবনে। ফলে পাঠক একেকটি কবিতায় খুঁজে পাবেন কখনো ব্যক্তিগত অনুভূতি, কখনো সামাজিক বিদ্রোহ, কখনো নিঃসঙ্গ প্রতীক্ষা, কখনো আবার জীবনের প্রতি অবিচল আস্থা।
এই সংকলন তাই নিছক কবিতার সমাহার নয়, বরং এক যাত্রাপথ। যেখানে শব্দ হয়ে উঠেছে আয়না, পংক্তি হয়ে উঠেছে সময়ের দলিল, আর প্রতিটি কবিতা মিলেমিশে গড়ে তুলেছে মানুষের ভালোবাসা, বেদনা ও স্বপ্নের অনন্ত কাব্যগাথা। পাঠকের কাছে এই যাত্রা হবে কেবল পাঠ নয়, বরং এক অন্তরঙ্গ আত্মসন্ধান।