আশিক মোকামীর লেখা ফ্যাক্টোরিয়াল শূন্য একটি গভীরভাবে দার্শনিক, বিমূর্ত ও আত্মজিজ্ঞাসামূলক উপন্যাস, যেখানে জীবন ও মৃত্যুর সীমারেখা, প্রেম ও বিচ্ছেদ, স্মৃতি ও অস্তিত্বের অর্থ এক রহস্যময় জগতে মিলেমিশে যায়। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আশিক—যে লেখকের নামেও প্রতিফলিত—একজন আত্মা, যে মৃত্যুর আগে পৃথিবীর এক মহাদেশ জায়গা থেকে রহস্যময় পরকালের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে, যেখানে শরীর নেই, সময় নেই—শুধু আত্মার ভেসে চলা, স্মৃতির গুঞ্জন আর গভীর উপলব্ধি।
পরকালে আশিকের কাহিনী প্রবাহ শুরু হয় এক উজ্জ্বল বাদামি চোখের মেয়েকে খোজা নিয়ে—যে তার জন্য পুনর্জন্মের প্রতীক। তার এই খোঁজ হয়ে ওঠে আত্মার মুক্তির এক অন্তহীন অনুসন্ধান, যেখানে প্রেম, জীবন ও মৃত্যু এক অভিন্ন কাহিনির পরিণত রূপ। তার প্রবাহে সে আবিষ্কার করে পরকালে তার ব্যক্তি-দুঃখ, একতরফা প্রেম ও আত্মিক নিঃসঙ্গতা। নিজের সাথে লড়াই করতে করতেই আশিক তার প্রেমিকা নাবিলাকে বিয়ে করলেও শীঘ্রই হারিয়ে ফেলে। সেই শূন্যতা তাকে ঠেলে দেয় এক অস্তিত্বগত সংকটে। তার পরকালীন ভাসমানতা তাকে ধীরে ধীরে এক মহামূল্য উপলব্ধির দিকে ঠেলে দেয়—সে উপলব্ধি, প্রেম ও অস্তিত্ব একটি নিরবিচ্ছিন্ন কল্পচক্র, যার কোনো সহজ ব্যাখ্যা নেই।
এই বইটির প্রথম যাত্রায় আশিক প্রেম ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে মানব অস্তিত্বের এক মহাজাগতিক অঙ্ক মেলাতে চায়, যেখানে প্রতিটি জীবন একেকটি কণা, আর সেই কণাগুলোর সম্মিলনে সৃষ্টি হয় "ফ্যাক্টোরিয়াল শূন্য"—যার মান সবসময় থাকে এক। অংক মিলাতে মিলতেই সে প্রবেশ করে পরকালের আরো অন্তরালের জগতে।
গভীর দর্শন, কবিতার ছন্দ, আত্মোপলব্ধি আর জীবনের পরতগুলোকে চিরে লেখা এই উপন্যাসটি কেবল ব্যক্তিগত নয়—এটি মানবজাতির চেতনার এক মৌলিক অনুসন্ধান।
প্রথম যাত্রায় লেখক আশিক হিসেবে প্রবাহ করলেও, দ্বিতীয় যাত্রায় বাইরে থেকে থেকে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় আশিক আর নাবিলার পরকালে জন্ম নেয়া ছেলে লুকার, যে কিনা আসলেও আশিকের সাথে নাবিলার সমীকরণের মান, এক লুকা। লুকার দৃষ্টিভঙ্গি থাকে তার বাবা-মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যতিক্রম।