সিলিকন দিয়ে তৈরি মাইক্রোচিপ আজকের দিনে আর শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক্সেই সীমাবদ্ধ নেই। এই সেমিকন্ডাক্টর চিপ আগামী দিনে জ্বালানি তেলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হতে চলেছে। তেল নিয়ে যে বিখ্যাত ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে, হয়তো তার থেকেও ভয়াবহ হবে এই সেমিকন্ডাক্টরের রাজনীতি। কারণ আজকের এই আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি হলো সেমিকন্ডাক্টর চিপ। এমনকি সামরিক শক্তি, অর্থনীতি বা ভূরাজনৈতিক ক্ষমতার সবচেয়ে বড় ভিত্তি হলো এই সেমিকন্ডাক্টর। মিসাইল হোক বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সেটা তৈরি করতে শেষ পর্যন্ত এই চিপ ছাড়া গতি নেই। ফলে পৃথিবী যত আধুনিক হচ্ছে এই সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেশগুলোও তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে বা অন্য দেশের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এই প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠছে।
একটা সময়ে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি ছিল একচেটিয়া আমেরিকার দখলে। কিন্তু এখন তাইওয়ান, কোরিয়া, ইউরোপ এবং সর্বোপরি চীনের প্রতিযোগিতার কারণে আমেরিকার হাত থেকে এই ইন্ডাস্ট্রির আধিপত্য চলে যেতে বসেছে। এই চিপ তৈরির প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রীতিমতো এক ভূরাজনৈতিক যুদ্ধ। অনেকেই এটাকে বলেন "চিপ ওয়ার"। চীন এখন তেল আমদানির চেয়ে চিপ আমদানিতে বেশি অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু চীনের লক্ষ্য সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এখন চীনকে যদি এই চিপ আমদানিই করতে হয়, তাহলে চীন কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াতে পারবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য চীন চিপ তৈরির উদ্যোগে বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার ঢেলে দিচ্ছে। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে আমেরিকার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ক্রিস মিলার তার লেখা “Chip War” বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে চিপ ডিজাইন এবং উৎপাদনে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। আর এই চিপ তৈরির কারণেই কীভাবে দেশটি সামরিক শক্তিতে মারাত্মক অগ্রগতি লাভ করেছিল। স্নায়ুযুদ্ধে আমেরিকার বিজয় এবং এর বৈশ্বিক সামরিক আধিপত্যের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমেরিকার কম্পিউটিং শক্তি। কিন্তু এখন চীন তার চিপ তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সামরিক আধুনিকীকরণের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আগামী দিনে কী হতে চলেছে? চীন কি আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে? কার হাতে থাকবে বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ?
ভূরাজনীতি, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আগামী দিনের প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহীদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য।