Category:যুদ্ধকৌশল ও পররাষ্ট্রনীতি
আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
সান ত্জু উ ছিলেন চি রাজ্যের অধিবাসী। তাঁর রচিত যুদ্ধকলা রাজা হো লুর নজরে আসে। রাজা হো লু তাকে ডেকে বললেন, “আমি তোমার লেখা তেরোটি অধ্যায় মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। তোমার সেনা পরিচালনার তত্ত্বটি কি আমি একটি ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করতে পারি?”
সান ত্জু উত্তর দিলেন, “নিশ্চয়ই পারেন।”
রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “এই পরীক্ষা কি নারীদের ওপর চালানো যাবে?”
আবারও তিনি ইতিবাচক উত্তর দেন। তখন প্রাসাদ থেকে ১৮০ জন নারীকেই আনা হলো। সান ত্জু তাদের দুইটি দলে ভাগ করলেন এবং প্রতিটি দলের নেতৃত্বে রাজার প্রিয় দুই উপপত্নীকে বসালেন। এরপর তিনি তাদের হাতে বর্শা দিয়ে বললেন—
“আমি ধরে নিচ্ছি, তোমরা সামনের দিক, পিছনের দিক, ডান দিক ও বাম দিকের পার্থক্য জানো?”
নারীরা একসঙ্গে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”
তিনি বললেন—
“যখন আমি বলব ‘চোখ সামনে’, তখন তোমরা সরাসরি সামনের দিকে তাকাবে। যখন বলব ‘বামে ঘুরো’, তখন বাম দিকে মুখ ফেরাবে। ‘ডানে ঘুরো’ বললে ডান দিকে মুখ করবে। আর যখন বলব ‘পিছনে ঘুরো’, তখন পেছনের দিকে মুখ ফেরাবে।”
আবারও নারীরা সম্মতি জানাল। নির্দেশাবলি বুঝিয়ে দেওয়ার পর তিনি যুদ্ধের কুঠার ও হালবার্ড সাজিয়ে অনুশীলন শুরু করলেন। ঢোলের শব্দের সঙ্গে তিনি প্রথম নির্দেশ দিলেন— “ডানে ঘুরো।” কিন্তু নারীরা হেসে উঠল।
সান ত্জু শান্তভাবে বললেন, “যদি নির্দেশ স্পষ্ট না হয়, যদি আদেশ পরিষ্কারভাবে বোঝা না যায়, তবে দোষ সেনাপতির।”
তিনি পুনরায় অনুশীলন শুরু করলেন এবং এবার বললেন, “বামে ঘুরো।” কিন্তু নারীরা আবারও হেসে উঠল। তখন তিনি বললেন,
“যদি নির্দেশ স্পষ্ট না হয়, সেনাপতির দোষ। কিন্তু যদি নির্দেশ স্পষ্ট হয়, অথচ সৈন্যরা মানতে অস্বীকার করে, তবে দোষ তাদের নেতাদের।”
এই বলে তিনি দুই দলের নেত্রী—রাজার প্রিয় দুই উপপত্নী—কে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন।
রাজা হো লু, যিনি উঁচু মঞ্চ থেকে এই দৃশ্য দেখছিলেন, ভীত হয়ে তৎক্ষণাৎ বার্তা পাঠালেন—
“আমরা তোমার দক্ষতায় সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। যদি এই দুই উপপত্নী হারাই, তবে আমাদের আহারের স্বাদ ম্লান হয়ে যাবে। আমরা চাই না তারা নিহত হোক।”
সান ত্জু জবাব দিলেন—
“একবার যখন মহামান্য আমাকে সেনাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন, তখন সেই ভূমিকায় থেকে কিছু আদেশ আমি অমান্য করতে পারি না।”
তিনি দুই নেত্রীকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করালেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী দুইজনকে নেতৃত্বে বসালেন। আবার অনুশীলন শুরু হলো— এবার নারীরা নিখুঁতভাবে প্রতিটি নির্দেশ পালন করল; ডানে-বামে ঘুরল, এগোল ও পিছু হটল, হাঁটু গেড়ে বসল ও দাঁড়াল—সবই নিরব, শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং নির্ভুলভাবে।
এরপর সান ত্জু রাজার কাছে বার্তা পাঠালেন—
“মহারাজ, আপনার সৈন্যরা এখন পূর্ণ প্রশিক্ষিত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। আপনি চাইলে তাদের আগুনে কিংবা জলে পাঠাতে পারেন, তারা অবাধ্য হবে না।”
রাজা জবাব দিলেন—
“আমাদের সেনাপতি এখন অনুশীলন বন্ধ করে শিবিরে ফিরে যাক। আমরা নিজে এসে সৈন্য পরিদর্শন করার ইচ্ছা রাখি না।”
তখন সান ত্জু মন্তব্য করলেন—
“রাজা কেবল কথায় আগ্রহী, কাজে নয়।”
এরপর রাজা হো লু বুঝতে পারলেন যে সান ত্জু সত্যিই একজন সেনা পরিচালনায় পারদর্শী ব্যক্তি। তিনি সান ত্জুকে সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিলেন। পশ্চিমে তিনি চু রাজ্যকে পরাজিত করে রাজধানী ইং দখল করলেন; উত্তরে চি ও জিন রাজ্যে ভীতি সঞ্চার করলেন এবং তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। সান ত্জু রাজ্যের শক্তি ও গৌরবে অংশীদার হলেন।
— স্সু-মা চ্ইয়েন (প্রায় ১৪৫ খ্রিঃপূঃ – ৮৬ খ্রিঃপূঃ)
Report incorrect information