আমরা যদি ধনী হই, তা কুরআনের এই সমৃদ্ধ রত্ন ভাণ্ডারের কারণে। কুরআন অধ্যয়নে যে মণি-মুক্তা অর্জিত হয়, তাহলে আমরা তা আপনাদের সামনে পেশ করি। কুরআনের রত্ন ভাণ্ডার পুরো মানবতা ও আদম আ. এর পুরো বংশধরের জন্য যথেষ্ট। বড় বড় শাসক ও বিত্তবানদের দেওয়ার জন্য যদি কিছু থাকে, যা সকল প্রভাবশালীর প্রভাব ও সম্পদশালীর সম্পদ বৃদ্ধি করতে পারে, যা দুনিয়া বদলে দিতে পারে, যা হতে পারে সৌভাগ্যের জিয়ন কাঠি, তা এই কুরআন মাজিলেরই অনুদান।
কুরআন মাজিদ কাউকে সপ্ত জমিনের তলদেশ থেকে নক্ষত্রের দেশে পৌঁছে দিতে পারে। আবার যারা কুরআন মতে আমল করে না, তাদের অলোমুখী করে ফেলেও দিতে পাবে। কুরআন আরবের অসহায় যাযাবর, আর সম্বলহীন মরু বাসিন্দাদের কোথেকে নিয়ে কোথায় পৌঁছে দিয়েছে। অথচ তাদের না ছিল পেট ভরে খাবার উপকরণ, আর না ছিল শরীর আচ্ছাদিত করার যথেষ্ট অবরণ। কুরআনের কী ম্যাজিক পাওয়ার। যার ছোঁয়ায় তুচ্ছও পেয়ে যায় অতুল্য সম্মান! কবি বলেছেন,
خود نہ تھے جو راہ ہے اور وں کے بادی بن گئے کیا نظر تھی جس نے مردوں کو مسیحا کر دیا۔
অর্থাৎ যারা নিজেরাই সঠিক পথে ছিল না, তারাই হায়ে গেলো সঠিক পথের সন্তানদাতা। কেমন ছিল সেই দৃষ্টি, রোগীকেই চিকিৎসক বানিয়ে নিয়েছে।
আবিবের গ্রাম্য লোক, গৃহজীন যাযাবর, দুনিয়া যাদের ভ্রুক্ষেপই করত না, কিন্তু এটি হলো সেই কুরআন, যা সেই তাদেরই বানিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার রক্ষক, নিয়ন্ত্রক ও দুনিয়ার শান্তি-সজ্জার ধারক। এই কুরআনের বদৌলতে তারা রোম-পারস্যের রাজমুকুট পদদলিত করেছে। তাদের রাজ সিংহাসনে এমনাভাবে এসেছে, যেভাবে কেউ চা উইিয়ের ওপর বসো কবি বলেছেন,
در شهرستان در اخلوت گزیده قوم و آئین و حکومت آفرید ماند شبها چشم او محروم نوم تا به تخت خسر ولی خوابیده قوم
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।