বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সূচনা হিকির গেজেটের মাধ্যমে। সেই থেকে আজ অবধি সংবাদপত্র-সাময়িকী থেকে টেলিভিশন এমনকি হালের অনলাইন মিডিয়ায় সাংবাদিকতা করে আসছেন যাঁরা, তাঁদের সবারই যে সাংবাদিকতার পেশাগত ডিগ্রি রয়েছে, তা কিন্তু নয় । তবে তাঁদের অনেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সুনাম কুড়িয়েছেন, যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁদের সহায়তার জন্য প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সাংবাদিকতার বিভিন্ন গ্রন্থ ও সাময়িকী প্রকাশ করে ।
গণমাধ্যম সাময়িকী ‘নিরীক্ষা’ পিআইবি'র এ ধরনের একটি প্রয়াস। নিরীক্ষা'য় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে যেমন সহায়তা করে থাকে, তেমনই নবীন লেখকদের উৎসাহ প্রদান করে। আমাদের আলোচ্য গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভেতর-বাহির'-এ বিভিন্ন সময়ে নিরীক্ষা'য় প্রকাশিত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট বেশকিছু লেখার সন্নিবেশ ঘটেছে। সব লেখাই বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের। ১৯৮০ থেকে শুরু করে ২০১০ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষায় প্রকাশিত তাঁর মোট ১৯টি লেখা এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা ‘আজাদ পত্রিকায় ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন', প্রযুক্তি নিয়ে লেখা ‘সংবাদপত্র: নতুন প্রযুক্তির মুখোমুখি', আঞ্চলিক সাংবাদপত্র নিয়ে লেখা ‘আঞ্চলিক সংবাদপত্র কীরকম হতে পারে'। রয়েছে সাংবাদিকতার মহিরুহ আবদুস সালামকে নিয়ে লেখা ‘স্মরণীয়-বরণীয় সাংবাদিক আবদুস সালাম'। সাংবাদিকতা অঙ্গনের প্রতিটি দিকের সমস্যা তুলে এনে সমাধানের দিশা দিতেন এসব প্রবন্ধে ।
এসব লেখা একত্রিত করে আমরা চেষ্টা করেছি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের স্মৃতিকে ধরে রাখতে। সাংবাদিকতার শিক্ষক ও ছাত্রদের এ গ্রন্থটি কিঞ্চিৎ পরিমাণ উপকারে লাগলে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর (জন্ম ১৯৫১) মিডিয়া বিষয়ক একজন লেখক হিসেবে সুপরিচিত। মিডিয়া ছাড়াও তিনি রাজনীতি ও অন্যান্য সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখেন। দল নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও সমস্যা সমাধানে তাঁর মৌলিক চিন্তা অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মূলতঃ ঢাকার দৈনিক 'প্রথম আলো' ও চট্টগ্রামের দৈনিক 'আজাদীতে' তিনি নিয়মিত লেখেন। চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় (দৈনিক পাকিস্তান) যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি সক্রিয় সাংবাদিকতা ছেড়ে প্রেস ইনষ্টিটিউট অব বাংলাদেশ-এ সাংবাদিক প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৫ সালে তিনি সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট কম্যুনিকেশন নামে একটি বেসরকারি মিডিয়া সংস্থা গঠন করে এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে বেতার ও ১৯৭৬ সাল থেকে টিভি মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। চলতি বিষয়ধর্মী টক শো'র সফল মডারেটর হিসেবে তিনি বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ এম এ ও সাংবাদিকতায় এম এ ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব) এর মিডিয়া ষ্টাডিজ এ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের খন্ডকালীন অধ্যাপক।