‘আমি কি সুন্দর?’ আপনি কি কখনো নিজেকে এই প্রশ্নটা করেছেন? হয়তো মোবাইল বা টিভির পর্দায় দেখা কারো সাথে নিজের তুলনা করে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, অথবা কারো তাচ্ছিল্য ভরা কথার পরে? হয়তো মুখ ফুটে বলা হয় না, কিন্তু নীরবে, নিভৃতে এই প্রশ্নটি আমাদের আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করতে থাকে। ‘আমি কি সুন্দর?’ এমন এক মননশীল গল্পের বই, যা আমাদের সমাজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তির মুল্যায়নের মানদণ্ড নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে। বইটি সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন ধ্যান-ধারণা আর মতের টানাপোড়েনকে গল্পে বুনে শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে শেখায়- সকল পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে শুধু মানুষ পরিচয়টি গ্রহণ করতে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস অর্জন এবং আত্মপরিচয়ে গর্বিত হতে।
বইটিতে রয়েছে রশ্মি, বিদিতা, রাশিক, ইভান, রুকাইয়ার মতো একাধিক চরিত্র- যারা ছোটবেলা থেকেই তাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং সমাজের ঠুনকো আদর্শের মাপকাঠির যাঁতাকলে পড়ে হীনমন্যতায় ভুগে আসছে। চরিত্রগুলোর পথচলা, জীবনের সংগ্রাম, তাদের পরিবার, বন্ধুত্ব ও প্রতিকূলতার গল্প তুলে ধরে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শেখায় কীভাবে নেতিবাচকতার মোকাবেলা করা যায় ইতিবাচক বিশ্বাস ও প্রতিবাদের মাধ্যমে। যদিও গল্পটি কিছু নির্দিষ্ট বয়সের চরিত্রের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে, তবে এই বইটি কোনো নির্দিষ্ট বয়সের জন্য নয়। গল্পের বক্তব্যগুলো বড়দেরও প্রবলভাবে স্পর্শ করবে। পাঠকরা যে বয়সেরই হোক না কেন, এই গল্পগুলো তাদের অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি কখনো নিজের সৌন্দর্য নিয়ে সন্দিহান হয়ে থাকেন, যদি কারো কটাক্ষ মনে ক্ষত তৈরি করে থাকে, অথবা যদি আপনি চান অন্যকে উৎসাহিত করতে, যে এমন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, অথবা আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে এই কলুষতা থেকে মুক্ত রাখতে- তাহলে এই বই আপনার জন্য। শেষ পৃষ্ঠাটা উল্টানোর পর আপনি হয়তো নতুন করে নিজেকে ভালোবাসতে শিখবেন। কারণ এই বই একটাই কথা বলে, ‘আপনি যেমন, তেমনই সুন্দর’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে BBA এবং MBA শেষ করে বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডে ‘সোশ্যাল মিডিয়া মিসইনফরমেশন’ এর ওপর পিএইচডি করছেন।
বাংলাদেশে ‘বিজ্ঞানসম্মত স্কিন কেয়ার’ এর পথিকৃৎ সারাহ গত পাঁচ বছর আগে তার পথচলা শুরু করেন সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল ‘‘সারাহ’স কোয়েস্ট’’ এর মাধ্যমে। তার কনটেন্ট এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়িয়ে পড়া ভ্রান্ত ধারণা ও ক্ষতিকর বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন গবেষণা ও বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করার।
তবে এ সব কিছু ছাপিয়ে তিনি মানুষের ভালোবাসা ও পরিচিতি লাভ করেছেন যে কারণে তা হলো; বর্ণবৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য এবং বুলিং এর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ এবং এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনার কারণে।
তিনি প্রায়ই তার অনুসারীদের জীবনের গল্প তুলে ধরেন, ব্যাখ্যা করেন, কিভাবে আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার সুন্দর সৃষ্টি এবং রঙ, আকার বা বাহ্যিকতার তারতম্য কখনোই বৈষম্যের বা তাচ্ছিল্য কারণ হতে পারে না। তার কথা, উক্তি ও বক্তব্য থেকে তার অসংখ্য অনুরাগীরা পায় সাহস ও অনুপ্রেরণা।
তার সেই নিঃস্বার্থ চেষ্টাকে তিনি বইতে রূপ দিয়েছেন তার লেখা প্রথম বই ‘আমি কি সুন্দর?’ এর মাধ্যমে।