নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়, তবে নির্বাচন গণতন্ত্রের ভীত রচনা করে। ভীত শক্ত না হলে গণতন্ত্র পরিপূর্ণতা অর্জন করে না। নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে অথবা ভোটারদের ভোট প্রদানে ঘাটতি দেখা দিলে অথবা কারচুপির নির্বাচন হলে তার মাধ্যমে যে গণতন্ত্র ও সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলা হয় 'হাইব্রিড গণতন্ত্র ও সরকার'। এবং নির্বাচন যদি অব্যাহতভাবে সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য না হয় তবে ক্রমেই ভোটারগণ ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, যা গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়।
যাহোক, আমি মনে করি, নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সাধারণ জনগণ যথেষ্ট সচেতন হলেও এর প্রায়োগিক ও অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয়। ভোটাধিকার, আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার। কাজেই এ বিষয়ে ভোটারদের যেমন অধিকার সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকতে হয়, তেমনি যারা পরিচালনার দায়িত্বে থাকে- সরকার ও নির্বাচন কমিশন- তাদেরও পবিত্র দায়িত্ব জনতার ভোটাধিকারকে সংরক্ষিত করা। নির্বাচন পরিচালনার জন্য শুধু আইনই নয়, প্রয়োজন পরিবেশ সৃষ্টির। আমাদের মত দেশে নির্বাচন পরিবেশ সৃষ্টি একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। পরিবেশের সাথে সাথে ভোটারদের অধিকার সম্বন্ধেও সচেতন করা প্রয়োজন।
নির্বাচন পদ্ধতি ও বিষয়াদির উপরে লেখা বই তেমন নেই। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য এ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হওয়া উচিত; এমনকি বিষয়টি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচিতে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি।
উপরের এই সব ধারণা নিয়েই আমার এই সংকলনটি। আশা করি, সার্বজনীন পাঠকদের কাছেও এই বইটি ভাল লাগবে এবং যারা গবেষণা ইত্যাদি করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যও উপযোগী হবে।
১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।
স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত তিনি একজন মিলিটারি এনালিস্ট, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট এবং নিয়মিত টক শো তে অংশগ্রহণ করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং তিনি ১০ দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।