১৯০১ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত সময়টি বাংলা অঞ্চলের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও সমাজ ভাবনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে সম্পর্ক। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার প্রথা ও শিক্ষা এবং ব্যবসায় অগ্রগতির কল্যাণে এর আগের শতকটিতে হিন্দু মধ্যবিত্তের বিপুল বিকাশ ঘটে। আলোচ্য সময়টিতে মুসলমানরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং জমিদারি প্রথাবিরোধী রায়ত ও ভাগচাষীর নানান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ ঘটাতে থাকেন। নতুন উত্থিত মুসলমান মধ্যবিত্তের স্থান রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কীভাবে নির্ধারিত হবে, এই প্রশ্নটিই যাবতীয় তর্ক-বিতর্ক-পর্যালোচনার পেছনের প্রেরণা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
‘সাময়িকপত্রে হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক’ গ্রন্থটি এই দিক দিয়ে একটি অনন্য কাজ। যে প্রশ্নটির রক্তপাতময় মীমাংসা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের কলকাতার ভয়াবহ দাঙ্গায়, যার রাজনৈতিক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বঙ্গভঙ্গ ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে, সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদে, হিন্দু মহাসভার উত্থান ও পাকিস্তান আন্দোলনে; জমিদারি প্রথাবিরোধী সংগ্রাম ও তেভাগা আন্দোলনে ছিল যার অর্থনৈতিক প্রকাশ, যার সাংস্কৃতিক রূপ মূর্ত হয়েছিল ‘বাঙালিত্ব’ বিষয়ক অজস্র তর্ক ও বিতর্কে, তার অবয়ব অনেকটাই আঁচ করা যাবে এই গ্রন্থটির পাতায় পাতায়।
বাংলাভাষার বরেণ্য কোনো কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, চিন্তকই সেই আলোড়নের বাইরে ছিলেন না, ফলে তাদের প্রায় সকলেই এই গ্রন্থে উপস্থিত রয়েছেন। বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী প্রত্যেকেই এই গ্রন্থটির কাছে বারবার ফেরত আসবেন।