প্রায় সাত দশক আগে, এক অনুবাদ কবিতাসংকলন ছেপে বেরোনোর পর বাংলা সাহিত্যজগৎ তীব্র আলোড়নে একইসঙ্গে অস্থির ও ঋদ্ধ হয়ে উঠেছিল। সেই অনুবাদ বুদ্ধদেব বসুর, কবিতা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যিনি ততদিনে নিজেই এক কিংবদন্তিতে পরিণত। আর বইটি, শার্ল বোদলেয়ার : তাঁর কবিতা। বাংলা কবিতার পরিসরে তখনও এমন সাহসী ও শিল্পসম্মত অনুবাদ ছিল একান্তই বিরল; একদিকে বোদলেয়ারের অনিবার্য আধুনিকতা, অন্যদিকে বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদের সুসংযত ভাষা ও কাব্যবোধ—এই দুইয়ের সম্মিলনে সংকলনটি হয়ে উঠেছিল এক যুগান্তকারী সৃষ্টি। বোদলেয়ার আধুনিক ফরাসি কবিতার অন্যতম পথপ্রদর্শক। সঙ্গে বুদ্ধদেব বসুও নিজে বাংলা কবিতার নিজস্ব আধুনিকতার নির্মাণযজ্ঞের অন্যতম অগ্রদূত। বোদলেয়ারের কবিতার বিষাদ ও বিস্ময় অথবা সৌন্দর্য ও পাপের বৈপরীত্যমাখা জগতের বাংলায়নে বুদ্ধদেবকে ছাড়িয়ে যাওয়া আজও যেন অসম্ভব। যুগপৎ জান্তব এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী বোদলেয়ারের কাব্যবাণীর এই অবিকল্প বঙ্গানুবাদ ষাট-সত্তর দশকের তরুণ বাঙালি কবিদের রীতিমতো আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। আধুনিক বাংলা কবিতার বিকাশের নেপথ্যে এ সংকলন কোনো কাব্য-আন্দোলনের চেয়ে কম ভূমিকা রাখেনি, এ কথা বললে তাই অত্যুক্তি হয় না। আজকের পাঠকের কাছে এ বই নিছক একটি অনূদিত কাব্যগ্রন্থ নয়—এ এক সাহিত্য-ঐতিহ্যের দলিল, দুই মহাদেশের দুই কবিতাস্রষ্টার সংলাপ, যেটি আমাদের কবিতার বোধ ও রুচিকে আজও আলোড়িত করে।
শার্ল বোদলেয়ার (পুরো নাম - Charles-Pierre Baudelaire; উচ্চারণ শার্ল-পিয়ের বোদলেয়ার; জন্ম - ৯ই এপ্রিল, ১৮২১ পারিতে - ৩১শে অগাস্ট, ১৮৬৭ র্যু দু দোম) ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম কবি ও অনুবাদক। প্রাবন্ধিক ও শিল্প-সমালোচক হিসেবে তার কাজও উল্লেখের দাবি রাখে। ফরাসিতে এডগার অ্যালান পোর অন্যতম প্রথম অনুবাদক ছিলেন তিনি।