কল্যাণী — জীবনানন্দ দাশের অপরিচিত অথচ গভীরভাবে অনুভবী এক উপন্যাস। এটি তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পর ১৯৮১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে নেই প্রচলিত কাহিনির ছক, নেই সাদা-কালো চরিত্রায়ন; আছে শুধু মানুষের একাকীত্ব, ক্লান্তি, অন্বেষণ এবং হারানোর গভীর বোধ।
নামমাত্র নায়িকা কল্যাণী—এক রহস্যময়, অন্তর্মুখী, আত্মনির্ভরশীল নারী। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসে এক পুরুষ চরিত্র—একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষ, যিনি সময়ের ভারে, স্মৃতির ভারে এবং নিজের অসারতা-অনুভবে ভারাক্রান্ত। কল্যাণীর সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো জড়িয়ে যায় প্রেমে, কখনো আত্মীয়তার মতো, কখনোবা নিছক মানবিক নির্ভরতার টানে। কিন্তু এই সম্পর্ক কখনোই পরিণতির দিকে যায় না; বরং প্রতিটি মুহূর্তে প্রশ্ন তোলে মানুষের অস্তিত্ব, সম্পর্ক, আর সমাজে আমাদের অবস্থান নিয়ে।
এই উপন্যাসেও জীবনানন্দ দাশ তাঁর চিরচেনা বিষণ্ণ, ধীরলয় জীবনের ছাপ রেখেছেন—যেখানে চরিত্রেরা বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে তাদের নিঃশব্দ যন্ত্রণায়। উপন্যাসের ভাষা কাব্যিক, ভাবপ্রবণ এবং ক্ষীণ আলোয় দেখা স্বপ্নের মতো।
কল্যাণী উপন্যাসটি কোনও সমাধান দেয় না, বরং আমাদের নিয়ে যায় এমন এক দুনিয়ায়, যেখানে প্রশ্নগুলোই মুখ্য—উত্তর নয়। মানুষের অন্তর্জগত, সময়ের ক্ষরণ, এবং সম্পর্কের অনির্ধারিততা এখানে এক অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি করেছে।
জীবনানন্দ দাশ নিজে কখনও এই উপন্যাস প্রকাশ করেননি। হয়তো তিনি বুঝেছিলেন, সময় তখনো তৈরি নয় এমন একান্ত মানবিক অভিজ্ঞতা গ্রহণের জন্য। কিন্তু আজ, এই উপন্যাস আমাদের সামনে খুলে দেয় এক নিঃসঙ্গ, ভাবুক, অথচ মর্মস্পর্শী জগৎ—যেখানে কল্যাণী শুধু একটি নারী নয়, এক প্রশ্নচিহ্ন, এক ধ্বনিত-অধ্বনিত
জন্ম-(ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ - বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ - কার্তিক ৫, ১৩৬১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার "শুদ্ধতম কবি" বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা গ্রন্থ করেছেন যার একটিও তিনি জীবদ্দশায় প্রকাশ করেননি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকাল অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার প্রধান কবি হিসাবে তিনি সর্বসাধারণ্যে স্বীকৃত। তাকে বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি (অক্টোবর ২২, ১৯৫৪ -বঙ্গাব্দ কার্তিক ৫, ১৩৬১ ) সালে মৃত্যু বরণ করেন।