হাসান এক মনে হেঁটে চলেছে নিজ গন্তব্যের দিকে। চারপাশের কোলাহল, ব্যস্ত শহরের গর্জন যেন তার চেতনায় এক বিন্দুও প্রবেশ করতে পারছে না। ঠিক তখনই হঠাৎ পাশ থেকে একটি প্রাইভেটকার দ্রুত ব্রেক কষে থেমে যায়। আচমকা শব্দে থমকে দাঁড়ায় হাসান।
চোখ তুলে দেখে, জানালার ওপারে বসে আছে মালতী। তার গভীর চোখজোড়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে হাসানের দিকে। দু’জনের দৃষ্টি মুহূর্তে মিলিত হলো—নীরব, অথচ বিস্ফারিত এক অনুভবের বিনিময় যেন চলল কিছু ক্ষণের জন্য।
হাসান দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে দৃষ্টিতে লুকানো কোনো অতীতকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। সে হাঁটার জন্য পা বাড়ায়, কিন্তু ঠিক তখনই মালতী গ্লাস নামিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে,
— "হাসান সাহেব, কোথায় যাবেন?"
হাসান থামে, তবে মুখে কোনো শব্দ উচ্চারণ করে না। মালতী আবার বলে,
— "আসুন, আপনাকে পৌঁছে দেই।"
এই প্রস্তাবে হাসান কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে তার দিকে ফিরে তাকায়। চোখে চোখ পড়ে দু’জনের আবার—সেই পুরনো টান, সেই না বলা কথাগুলো যেন বাতাসে আবার ভেসে ওঠে। হাসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ নামিয়ে নেয়।
মালতী হালকা হাসি নিয়ে বলে,
— "কি ব্যাপার, আমাকে দেখে মাথা নিচু করলেন কেন?"
হাসান শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেয়,
— "আমার একটু তাড়া আছে। চলি।"
মালতী থামায় না, বরং বলে,
— "তাড়া আছে বলেই তো বলছি, গাড়িতে করে পৌঁছে দিই।"
হাসান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,
— "তার প্রয়োজন নেই। আমি ঠিকই পৌঁছে যাব। আপনার সৌজন্যতার জন্য ধন্যবাদ।"
এই বলে সে আবার পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে। শহরের কোলাহল আবার তাকে গ্রাস করে নেয়, পেছনে পড়ে থাকে মালতীর দৃষ্টি—নীরব, কিন্তু হাজারো না বলা কথায় ভারী।