অন্য আর দশটা ইঁদুরের চেয়ে কুটকুটির দাঁতগুলো বেশ সুন্দর ছিল। একদম করাতের মতো ধারালো। চকচকে। যে দেখতো সে-ই হিংসা করত। আর এতেই কুটকুটির অহংকার বেড়ে যায়। অন্য ইঁদুরকে দেখানোর জন্য আরও বেশি বেশি দাঁতে কটকট করতে থাকে। কারণে অকারণে এটা ওটা কাটতে লাগল। সেই থেকে পাড়া প্রতিবেশীরা ওর নাম রাখে কুটকুটি। সেও নামটি পেয়ে ভীষণ খুশি।
কুটকুটি ব্যথা সইতে না পেরে ডাক্তারের কাছে গেল। বড় বড় গোঁফওয়ালা বাঘা ইঁদুর। হাতুড়ে ডাক্তার। কুটকুটি সবকিছু বুঝিয়ে বলল। ডাক্তার সবকিছু ভালোভাবে দেখলেন। তারপর বললেন, তোমার দাঁতের অবস্থা ভালো না। তিনটি দাঁত তুলে ফেলতে হবে।
কুটকুটি শুনে লাফিয়ে উঠল।
এ কী বলছেন ডাক্তার সাহেব! তাহলে তো আমি মরেই যাব! বিনয়ের সাথে বলল, দাঁত না তুললে কি হয় না?
ডাক্তার বললেন, তা হয়। তবে এবারের মতো চিকিৎসা দিয়ে দিচ্ছি। ঠিক হলে হতেও পারে। তবে সাতদিন কিছু কাটতে পারবে না।
কুটকুটি বলল, সাতদিন! না খেয়ে আমি তো মরেই যাব।
ডাক্তার বললেন, মরবে না। তরল খাবার খেতে পারবে।
ওষুধ নিয়ে কুটকুটি বাড়ি ফিরে এলো।
প্রতিবেশীরা কুটকুটিকে দেখতে এলো। সবাই কুটকুটির ব্যথা দেখে কষ্ট পেল।
কুটকুটি বলল, বন্ধুরা আমি অহংকার করে ভুল করেছি। তাই এমন শাস্তি পাচ্ছি। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
কুটকুটির কথায় প্রতিবেশীরা খুশি হলো। সবাই কুটকুটিকে ক্ষমা করে দিল।
এমন সব মজার মজার ও শিক্ষণীয় ১৩টি গল্প নিয়ে কুটকুুটি ও হলুদ ধানের গল্প।
রকিবুল ইসলাম ১৯৮৫ সালের ১৮ জুন নাটোর জেলার সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল আজিজ প্রামাণিক এবং মাতা মোছা. রোকসানা বেগম। শৈশব থেকেই সাহিত্যচর্চার সূচনা; পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয়। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হিসাব বিভাগে কর্মরত। তবে কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি নিবেদিত সাহিত্যসৃষ্টিতে, বিশেষত শিশুদের জন্য ছড়া, গল্প ও পিকচার বই রচনায়। তাঁর লেখা বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোসহ দেশ-বিদেশের নানা লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি সম্পাদনা করছেন ছোটদের সাহিত্যপত্রিকা ‘ফুলকি’। তাঁর লেখা শিশুতোষ পিকচার বুক ‘সাহসী রিমা’ ১৩টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহপাঠ্য বই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বইটির প্রকাশক রুম টু রিড বাংলাদেশ। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: • সাহসী রিমা (পিকচার বুক, ২০১৬, রুম টু রিড বাংলাদেশ) • বিড়ালছানা কিটকি (গল্প, ২০১৮, সাহিত্যদেশ) • ব্যাঙের ছাতা (পিকচার বুক, ২০১৮, কালান্তর) • আমি কাকতাড়ুয়া (শিশু-কিশোর গল্প, ২০২০, শিশু গ্রন্থকুটির) • ফুটবল গুড বল (ছড়া, ২০২০, শিশু গ্রন্থকুটির) • কোথায় গেল নিপা (পিকচার বুক, ২০২০, রুম টু রিড বাংলাদেশ) • আমি এখন কাজ করছি (পিকচার বুক, ২০২১, ছোটদের বই) • বাংলার সাত বীরশ্রেষ্ঠ (জীবনী, ২০২৩, শিশু গ্রন্থকুটির) • কুটকুটি ও হলুদ ধানের গল্প (গল্প, ২০২৪, বাবুই) • হাতিরাজ বিপদে (পিকচার বুক, ২০২৫, শিশুরাজ্য) সম্মাননা ও পুরস্কার: রকিবুল ইসলাম শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর লেখা ছড়ার জন্য একাধিকবার পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তাঁর বই ‘সাহসী রিমা’ আন্তর্জাতিক শিশু শিক্ষা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রশংসিত হয়েছে এবং একাধিক দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি সাহিত্যকে শিশুমনের বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেখেন এবং বিশ্বাস করেন, সৃজনশীল সাহিত্যের মাধ্যমে মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব।