‘তোমার স্মৃতির শহরে’ এই উপন্যাস কোনো জোরালো সংলাপের গল্প নয়, নয় চমকপ্রদ কাহিনির বাঁক কিংবা উত্তেজনার ঘনঘটা। বরং, এটি একটি নীরবতার গল্প—যেখানে শব্দেরা উচ্চারিত হয় না, অনুভব হয়। ‘তোমার স্মৃতির শহরে’ হলো সেই শহরের কাহিনি, যেখানে দেখা আর না-দেখা, বলা আর না-বলা, থেকে যাওয়া আর হারিয়ে যাওয়া একে অপরের প্রতিস্মৃতি হয়ে ওঠে।
এই শহরে একটি কফিশপ আছে—‘কফিশপ নীড়’। এখানে প্রতিদিন সকাল আটটায় দেখা যায় এক কবিকে, নাম তার আরিব সেন। তার কবিতায় থাকে গভীর বিষণ্নতা, একাকিত্ব আর কোনো এক অদেখা অনুভবের টান। সে কারো জন্য লেখে না, আবার সবার জন্যই যেন লেখে। তার শব্দের ভিতর নীরবতা পা ফেলে হেঁটে যায়। এই গল্পের অন্য প্রান্তে আছে এক অন্ধ মেয়ে—তাশফিয়া রহমান তিশা। চোখে না দেখলেও সে শুনতে পারে, বুঝতে পারে, এমনকি অনুভব করতে পারে শব্দের গোপন ছায়া। তিশা আর আরিবের সম্পর্ক কোনো প্রেমচিত্র নয়, বরং তা এক নিঃশব্দ অনুভবের দীর্ঘসঙ্গ। তারা কেউ কারও কাছে কিছু চায় না, কেউ কারও থেকে কিছু নেয় না—তবু তারা ধীরে ধীরে পরস্পরের জীবনে গেঁথে যায়, এক অলিখিত স্মৃতির সুতোয়।
‘তোমার স্মৃতির শহরে’ উপন্যাস ঠিক সেই শহরের পটভূমিতে লেখা, যেটা শুধু বাস্তবের নয়, অনুভবের। যেখানে মানুষ হারিয়ে যায়, কিন্তু থেকে যায় তার রেখে যাওয়া চায়ের কাপ, লেখা একটি কবিতা, কিংবা ফেলে যাওয়া একটি প্রশ্ন।
‘তোমার স্মৃতির শহরে’ এমন এক যাত্রা, যেখানে পাঠক বুঝে যাবে—প্রেম কেবল স্পর্শে নয়, ভালোবাসা কেবল পাশে থাকার গল্প নয়। কখনও কখনও, না-থাকাটাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে গভীর উপস্থিতি। এই উপন্যাস তাঁদের জন্য, যারা শব্দের চেয়ে নীরবতাকে বেশি বিশ্বাস করে। যারা জানে, অনুপস্থিতির মধ্যেও কেউ থেকে যেতে পারে—একটা চেয়ারে, একটা কবিতায়, একটা নীরব দীর্ঘশ্বাসে।