সনাতন ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদ চর্চার ইতিহাস অতি প্রাচীন। বৈদিকযুগে আমাদের মুনি-ঋষিরা প্রকৃতির অসীম ভান্ডার থেকে তুলে এনেছিলেন সুন্দর, সুস্থ, নীরোগ, দীর্ঘ জীবনের উপায়। আজ থেকে আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর পূর্বে অথর্ব বেদে আয়ুর্বেদের কথা স্পষ্ট করে উল্লেখিত আছে। সংস্কৃত "আয়ুর" শব্দের অর্থ জীবন এবং "বেদ" কথাটির অর্থ জ্ঞান। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক বলা হয়-সেই মূল গ্রন্থ তিনটি হল- (১) চরক-সংহিতা (২) শুশ্রুত সংহিতা ও (৩) অষ্টাঙ্গ হৃদয় সংহিতা। এগুলো প্রায় ১২০০ বছর পূর্বের প্রাচীন গ্রন্থ। ভারতের অতীত গৌরবের দিনে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র শুধু ভারতবর্ষেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল বেশ কিছু প্রতিবেশী দেশেও। চাইনিজ পণ্ডিতরা সেই সময় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র পড়তে। চাইনিজ ভাষাতে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুদিত হয়েছিল। আধুনিক বিশ্ব কিন্তু আজ ফিরে আসতে চাইছে প্রাকৃতিক চিকিৎসায়। ভারতবর্ষের আয়ুর্বেদ সম্পর্কে তাঁদের অসীম আগ্রহ। কারণ হিসাবেও আমরা বলতেই পারি, আয়ুর্বেদ শরীরের পাশাপাশি, মন ও আত্মাকেও সুস্থ করে তুলতে সক্ষম। যা কিনা স্ট্রেস এবং স্ট্রেন বেড়ে যাওয়া আধুনিক জীবনে অত্যন্ত জরুরী।
পাশাপাশি কেমিক্যাল মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গোটা বিশ্বের মানুষ আজ কম-বেশি সচেতন। তাই দিন-দিন, বলা যায় প্রতিনিয়ত আয়ুর্বেদ চিকিৎসার উপর অনেক বেশি আস্থা ও আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। বর্তমানে এলোপ্যাথি চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যায়বহুল। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সীমাহীন ও সমবেত, সফল চিকিৎসা প্রদানে অক্ষম তা ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায় নির্জলা সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। যা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি ও নেচারোপ্যাথি পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নব উদ্ভাবিত হোমিওপ্যাথি ও অন্যান্য নব আবিষ্কৃত প্যাথি সমূহ সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। দিশাহীন মানুষ আজও যেমন অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভগবান বা super natural force এর ওপর বিশ্বাসী তেমনি সমান্তরালভাবে ভারতবর্ষের অতিপ্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর ও আস্থাশীল হতে বাধ্য হচ্ছে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার এর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নাই।