হুগলি আর সরস্বতী নদীর মাঝে মাছের আকারে ভূমি, অতীতের বন্দরনগরী সাতগাঁ। কত শত বছর ধরে আরব ও চীনা বণিকেরা এসেছে মৌসুমি হাওয়ায় পাল তুলে। পর্তুগিজ দিনেমার ওলন্দাজ ফরাসিরা ডেরা বেঁধেছে।
বহুবর্ণ সংস্কৃতির তাঁতে বোনা ভূখণ্ডে রামের মন্দির ঘিরে এক কনৌজি বৈদিক পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হল দেশভাগে ছিন্নমুল হয়ে আসা প্রত্নতত্ত্ববিদ যুবকের। সেই বিবাহের ফল বাপ্পাদিত্য, ছেলেবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে মার্টিন্স কোম্পানির ছোটো রেলগাড়ি চেপে এসেছে এই জাদুভূমিতে, যেখানে রেলের চাকায় বাজে কেরেস্তান-গোরস্তান ধ্বনি, হাওয়া দিলে গির্জার চালে বেড়ালের কান্নার মতো শব্দ হয়, যেখানে নারীরা নদীতে ডুব দিয়ে দূরবাসিনী আত্মীয়ার সঙ্গে জলে-জলে বার্তা বিনিময় করে, নৈয়ায়িকেরা কুয়োর পেতনির শাপে ব্যাঙ হয়ে যায়, প্যারিস থেকে তরুণ কবি এসে খুঁজে পায় তার ক্লেদজ কুসুম, সার্জেন-পাদরি নদীর খাত ঘুরিয়ে দেয়, দুর্দম তুর্কী যোদ্ধা এসে মায়াবী ভূমিতে বাঁধা পড়ে, সংস্কৃত শিখে গঙ্গাস্তোত্র লেখে, পুরুষেরা পুনর্জন্ম নিয়ে বংশে ফিরে আসে, এমনকি এক ফিরিঙ্গিও ফিরে আসে কাকাতুয়ারূপে….
স্মৃতির বিপুল ছিটমহল, রাষ্ট্রের নতুন আইনে সেখান থেকে নির্বাসনের খাঁড়া ঝুলছে বাপ্পাদিত্যর মাথায়। পুরাণকথা, ইতিহাস আর স্মৃতির সুতো দিয়ে হাওয়ার তাঁতে বোনা হলফনামা কি তাকে বাঁচাতে পারবে?
সাতশো বছর, একটি পরিবারের নটি প্রজন্ম ও উনপঞ্চাশটি মুখ্য চরিত্র (যার মধ্যে একটি কাকাতুয়া, একটি ঘোড়া ও একটি মোটরবাইক) নিয়ে বাংলা উপন্যাসের ধারায় এ এক অভূতপূর্ব কুহকী উন্মোচন।