সে ছিল এক ভয়ঙ্কর দুঃসময়। রক্তঝরা উনিশ শ একাত্তর। আমাদের জাতীয় জীবনের উজ্জ্বল ও বেদনামথিত অধ্যায়। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত করার মৃত্যুপণ লড়াইয়ে ব্যাপৃত হয়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষ। লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি মহামূল্য স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল নতুন একটি দেশের। নাম বাংলাদেশ। 'রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম'...। রক্তদামে পাওয়া সেই অত্যুজ্জ্বল অহঙ্কারের একাত্তর আমাদের এগিয়ে চলার অনির্বাণ প্রেরণা, শক্তি ও পাথেয়।
একাত্তরের মহতী মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, জাতীয় মনন- সবক্ষেত্রে গৌরবদীপ্ত এক ঐতিহ্য। শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য দূর করে মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল দেশ গঠনের অঙ্গীকার ও স্বপ্ন-প্রত্যয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পরতে পরতে জড়ানো। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নানামাত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথ পার হয়ে চূড়ান্ত পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করি উনিশ শ একাত্তরে।
উত্তাল অগ্নিগর্ভ সময়ের সেই লাল তারিখ ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবস। এই গ্রন্থে সংকলিত ২৬টি গল্পে বিধৃত হয়েছে রক্তভেজা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি, বীর যোদ্ধাদের কৃতিত্বগাথা, অধিকৃত দেশের ক্রন্দন, হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পাশবিক নির্মমতা, দেশের মুক্তির জন্যে প্রাণ উৎসর্গ, সেই সময়কার আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক চালচিত্র। তখনকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, শত্রু হনন, মুক্তিযুদ্ধের নানা দিকের ছবি আমরা পাবো এইসব গল্পের কুশলী বুনন, শৈল্পিক উৎকর্ষ এবং নান্দনিক উপস্থাপনায়। গল্প পাঠে নতুন প্রজন্ম স্পষ্ট ধারণা পেতে পারবে একাত্তরে আমরা আসলে কী চেয়েছিলাম।
হাসান হাফিজের জন্ম নারায়ণগঞ্জের সােনারগাঁও উপজেলার এলাহি নগর গ্রামে, ১৫ অক্টোবর ১৯৫৫। যখন ছিলেন স্কুলছাত্র, প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। পড়াশােনা করেছেন হােসেনপুর হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য,গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ.(ডাবল)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। দৈনিক বাংলায় সূচনা। আরাে কাজ করেছেন জনকণ্ঠ, কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ (এখন পাক্ষিক), বৈশাখী টেলিভিশন এবং আমার দেশ-এ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ১৪০। সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এই লেখক পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাঙ্ক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কলকাতার সৌহাদ্য কবিতা উৎসব সম্মাননা, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা, ঢাকা রিপাের্টার্স ইউনিটি লেখক সম্মাননা, কবিতালাপ পুরস্কার, কবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, স্বপ্নকুঁড়ি পদক ইত্যাদি। হাসান হাফিজ বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের (এফইজেবি) সাধারণ সম্পাদক, বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য। সাহিত্য-সাংবাদিকতা সূত্রে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ১৫ দেশ। তার স্ত্রী শাহীন আখতার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ডা. শিহান তাওসিফ গৌরব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত।