Category:বাংলা কবিতা
Get eBook Version
TK. 90নিশ্চিত ১টি বই ফ্রি সাহিত্যদেশ এর ৫০০+ টাকার বই অর্ডার করলে
বেলাল উদ্দিন আহমেদ
বন্ধুবর বদিউল আলমের সাহিত্যপ্রতিভা বহুমুখী। কবিতার পাশাপাশি তাঁর একাধিক উপন্যাস ও বেশ কিছু গল্প ইতোমধ্যেই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখার ললিত ধরণ আমাকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে।
এবার প্রায় শেষের দিকে, হঠাৎ একদিন বাংলা একাডেমির বইমেলায় গিয়ে অল্প কয়েকটি বইয়ের সঙ্গে বদিউলের কাব্যগ্রন্থ বিষণ্ণ ভূমি-ও সংগ্রহ করি। ফেসবুকে ‘বিষণ্ণ ভূমি’র ক্যাপশন দেখেই এর প্রতি আমার কৌতূহল জেগেছিল—জানতে ইচ্ছে করে, কবির ভাবনাটা আসলে কী? কী তাঁর অনুসিদ্ধান্ত?
গ্রন্থের ভূমিকায় কবি উল্লেখ করেছেন, তিনি নোবেলজয়ী টি. এস. এলিয়টের বিখ্যাত কবিতা The Waste Land-এর অনুবাদ নষ্টজমি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই বিষণ্ণভূমি রচনা করেছেন। তবে এই ক্ষেত্রে তিনি একই মলাটে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সনও প্রকাশ করেছেন, যা এক অভিনব প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সুরচিত গ্রন্থটিতে স্থান পাওয়া ছয়টি কবিতা হলো—ডিসেম্বর নিষ্ঠুরতমমাস, কলঙ্কের চূড়া থেকে নিচে, প্রমত্তা বন্যায় পিতৃবিয়োগ, খেলা অবিরাম চলছেচলবেই, আলো হয়ে জ্বলবে, এবং শেষ কথা।
সবগুলো কবিতা পাঠ করে আমার মনে হয়েছে, প্রতিটি কবিতা যেন মূল বিষণ্ণভূমি-র একেকটি প্লট; সব মিলিয়ে গড়ে তোলে বিষণ্ণতার সুরে বাঁধা একটি নিখুঁত স্বরলিপি। কবিতাগুলোর শিরোনামেই এর অন্তর্নিহিত বক্তব্য অনেকাংশে স্পষ্ট।
এর মধ্যে আলো হয়ে জ্বলবে কবিতাটি আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে—একটি আত্মদীপ্ত পুনর্জাগরণের প্রতীক যেন।
কবির দৃষ্টিতে, এই পৃথিবী মানেই বাঁচার জন্য মানুষের লড়াই-সংগ্রাম, মহৎ আদর্শের জন্য আত্মত্যাগ, প্রিয়জন হারানোর বেদনা ও নির্বাক কান্নার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা প্রজন্মের এক অনন্ত স্রোতধারা। মানুষের মতো পৃথিবীতে বিচরণশীল অন্যান্য জীবকেও প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। তাই পৃথিবীর যে মোহনীয় রূপ আমাদের সরল চোখে ধরা পড়ে, তা একধরনের বিভ্রম বৈ কিছু নয়।
শেষ কথা কবিতাটি গ্রন্থের সমাপ্তি চিহ্ন। কবি বলতে চেয়েছেন, এতকিছুর পরও পৃথিবীর গতি থেমে থাকে না, থাকবে না। নদীর ভাঙা-গড়ার মতো জীবনেরও ধ্বংস ও সৃষ্টির চক্র যুগে যুগে চলছে, চলবেই।
ব্যক্তির জীবন-মৃত্যু, আশা-নিরাশা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও সভ্যতার চাকা এগিয়ে যেতে থাকে। এক প্রজন্মের পরে আরেক প্রজন্ম পৃথিবীর বুকজুড়ে মানুষের লক্ষযুগের পদযাত্রা অব্যাহত রাখে। সত্যিই তো—যে মা সন্তানের জন্ম দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে, সেই শিশুই একদিন বিষণ্ণ ভূমি-তে তারই রক্তবীজ বপণ করবে।
পরিশেষে বলব, বিষণ্ণ ভূমি মূলত একধরনের মরমীবাদী কবিতাগুচ্ছ। বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জগতজিজ্ঞাসা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। তাই তো রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ লেখায় বলেছিলেন—
“রূপ নারায়ণের কূলে জেগে উঠিলাম—জানিলাম, এ জগত স্বপ্ননয়।”
মরমী কবি হাছন রাজাও উচ্চারণ করেছেন—
“কি ঘর বানাইমু আমিশূন্যেরও মাঝার!”
গ্রন্থের কবিতাগুলোর ভাষা সহজ, স্বচ্ছ এবং ছন্দবদ্ধ। ছাপা নিখুঁত, গ্রন্থের বিন্যাস মেদহীন ও ঝরঝরে—সুস্থ গড়নের এক সুতনুকা তন্বীর মতো। প্রচ্ছদটিও শিরোনামের ভাব ও অন্তর্নিহিত দ্যোতনাকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
আমি কবি কবির সুস্বাস্থ্য এবং তাঁর কাব্যগ্রন্থের বহুল পাঠ ও সাফল্য কামনা করি।
আলোচক: বেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি Railway (W) Zone-এরপরিচালক ছিলেন। সাহিত্য বিষয়ে তাঁর অনুরাগনিবিড়। নিয়মিত পাঠক এবং লেখক। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতাবিষয়ে তাঁর গভীরআলোচনা ও পর্যালোচনাপাঠকদের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটায়।
Report incorrect information